বাংলাদেশে যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রাথমিক ধাক্কাটা পড়ে কৃষক তথা চাষির ওপর। অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি, বন্যা-খরা সবকিছুতেই সবার আগে ক্ষতিগ্রস্ত হয় চাষীরা। কোথাও বন্যার পানিতে ফসলের ক্ষেত ডুবে যায়, কোথাও ভেসে যায় পুকুর বা খাল-বিল। এর রেশ গিয়ে পড়ে কৃষকের ওপর। প্রতিবছরই কোনো না কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা দেয় বাংলাদেশে। কৃষককেই গুনতে হয় তার মাসুল। এমনিতেই কৃষি উৎপাদনের ব্যয় বেড়েছে। উৎপাদিত ধানের ন্যায্য মূল্য দূরের কথা, ভরা মৌসুমেও উৎপাদন খরচ উঠে আসছে না অনেক ক্ষেত্রে। ফলে ধান উৎপাদনে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক। তারপরও যারা ধান চাষ করেছে, গেলবারের অতিবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে তাদের ফসল ভরা মাঠ তলিয়ে গেছে। ভারি বৃষ্টির সঙ্গে বানের পানি অনেক কৃষকের স্বপ্নভঙ্গের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণেই জলবায়ু বিপদাপন্ন ও পরিবেশগত বিপর্যয়ের হুমকির মধ্যে থাকা পৃথিবীর সবচাইতে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখানকার একটি নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার। সাম্প্রতিককালে বজ্রপাতকেও জাতীয় দুর্যোগের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কেননা এতেও মানুষের হতাহতের পরিমাণ ক্রমবর্ধমান। এইসব দুর্যোগ প্রাকৃতিক এবং এতে মানুষের কোনো হাত নেই বললেই চলে। তবে জলবায়ু ও পরিবেশ উন্নয়নে সচেষ্ট হলে অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগ হ্রাস পেতে পারে। এই দুর্যোগ মোকাবিলায় গত কয়েক দশকে গড়ে ওঠেছে পর্যাপ্ত অবকাঠামো।
দুর্যোগ উন্নয়নের অগ্রগতি, পরিকল্পনা আর বিনিয়োগকেও প্রচণ্ড ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সীমিত আয়ের দেশগুলো দুর্যোগের কারণেই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। এর ফলে মানব সমাজকে প্রতিনিয়ত নিত্য-নতুন সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়। দুর্যোগ মাঝে মাঝে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে যা মানুষের পক্ষে মোকাবিলা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। আমরা মনে করিÑ বিভিন্ন দুর্যোগের বিষয়ে সচেতন থাকলে এর ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। আর তা যদি যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হওয়া যায়, তাহলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকগুণ বেড়ে যায়। তাই দুর্যোগ মোকাবেলায় সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।