আজ ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা দিবস। বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবময় দিন আজ। দীর্ঘ পরাধীনতার নাগপাশ ছিন্ন করতে ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল। এর আগে ৭ মার্চের বিশাল জনসভায় বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ¯পষ্টই ঘোষণা করেছিলেন- এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ২৫ মার্চ গভীর রাতে বঙ্গবন্ধু এক ওয়্যারলেস বার্তায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। পাকিস্তানের শোষণ ও নিপীড়নের জাল থেকে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অস্তিত্ব পুনরুদ্ধারের প্রত্যয়ে সেই যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল বাঙালি জাতি।
১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী মুক্তির সংগ্রাম এবং অর্জিত সাফল্য বাঙালির জীবনে সর্বশ্রেষ্ঠ অধ্যায়। বাঙালির জাতিসত্তা বিকাশের ধারাবাহিক সংগ্রামের পূর্ণতা আসে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত এবং বহু ত্যাগের বিনিময়ে, দীর্ঘ নয় মাস সংগ্রামের পর বিজয়ের মধ্য দিয়ে। আজকের এই দিনে স্বাধীনতাযুদ্ধের সব শহীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং যারা নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন, তাদের সবাইকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।
স্বাধীনতা মানে কেবলই রাজনৈতিক পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্ত হওয়া নয়। নতুন মানচিত্র ও জাতীয় পতাকার গৌরবেও তা সীমিত থাকে না। স্বাধীনতা মানে ইচ্ছার স্বাধীনতা, রাজনীতির স্বাধীনতা এবং অবশ্যই উন্নতসমৃদ্ধ অর্থনৈতিক পরিবেশে শ্রেণি-পেশা-ধর্ম নির্বিশেষে সবার আরো ভালো থাকার জন্য নিশ্চিত অধিকার। অশেষ আত্মত্যাগের বিনিময়ে রাজনৈতিক স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছি সত্য। কিন্তু আজো আমরা অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনে সক্ষম হতে পারিনি। দেশ থেকে এখনো অপশক্তি মুক্ত করা যায়নি। তবে সুখবর এই যে, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। একাধিক ভয়ংকর অপরাধীর ফাঁসির রায়ও হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সকল সেক্টরে সাফল্য অর্জন করছে। আমরা স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছি। বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে দেশবিরোধী অপশক্তি সক্রিয় রয়েছে। তারা বাংলাদেশের উন্নয়ন চায় না। এই দেশের আলো-হাওয়ায় বেড়ে ওঠে এই দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। এই অপশক্তিকে রুখতে হলে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই। আমাদেরকে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হতে হবে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই চেতনা অব্যাহত থাকলে সেটি হবে মুক্তিযুদ্ধের শ্রেষ্ঠ অর্জন। অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক এবং অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে এভাবেই রচিত হবে প্রকৃত ও কার্যকর ভিত।
দীর্ঘদিন ধরে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। যা উন্নত রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে বড় সহায়ক। এই অবস্থা আমাদের ধরে রাখতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে অবশ্যই ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে হবে। তা না হলে দেশবিরোধী অপশক্তির আবার উত্থান ঘটবে। ব্যাহত হবে সকল উন্নয়ন। ভেস্তে যাবে আমাদের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন-সাধ।