বরিশালে ডিবিসি’র ক্যামেরা পারসন সুমন হাসানের ওপর বরিশাল মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ নির্যাতন চালিয়েছে। যা কখনোই কাম্য নয়।
গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, গত মঙ্গলবার দুপুরে ২টার দিকে অফিস থেকে বাসায় যাওয়ার পথে এক নিকটাত্মীয়কে গোয়েন্দা পুলিশে আটকের খবর পেয়ে সাংবাদিক সুমন হাসান ঘটনাস্থলে যান এবং পুলিশের কাছে পুরো বিষয়টি জানতে চান। একপর্যায়ে গোয়েন্দা পুলিশ তার পরিচয় জানতে চায়। সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই তার ওপর চড়াও হয় গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা। এ সময় প্রকাশ্যে তার পরনে থাকা টি-শার্ট টেনেহিঁচড়ে এবং পেটাতে পেটাতে তাকে গোয়েন্দা পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়। পথিমধ্যে তার অ-কোষ চেপে ধরাসহ অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। এছাড়া সাংবাদিক ও তাদের পরিবার নিয়েও নানা অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করা হয়। খবর পেয়ে তার সহকর্মীরা গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে যায়। সেখানে নির্যাতিত সাংবাদিক সুমনকে হাতকড়া পরিহিত অবস্থায় কাঁদতে দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন অন্যান্য সাংবাদিকরা। সাংবাদিকরা প্রতিবাদ মুখর হলে মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ওই দলে থাকা গোয়েন্দা পুলিশের ৮ সদস্যকে তাৎক্ষণিক পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়। ঘটনা তদন্তে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রুনা লায়লার নেতৃত্বে ৩ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়।
সাংবাদিকের ওপর এমন নির্যাতন নতুন নয়। এর আগেও বহুবার নানাভাবে সাংবাদিকদের হয়রানি ও নির্যাতন করা হয়েছে। যেটা কোনো সভ্য দেশের মানুষ আশা করে না। বিগত দিনে আমাদের দেশে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনার বিচার না হওয়ায় সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন, হয়রানি ও আক্রমণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। অপরাধীরা একজোট হয়ে সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হচ্ছে। নির্যাতনকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার দায়িত্ব যাদের হাতে সেই পুলিশই এখন সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। এসব ঘটনা আমাদের জানান দেয়, পুলিশের ভেতরে পেশাদারিত্বের অভাব দেখা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপ্রতি দেশের পুলিশকে জনবান্ধব হওয়ার জন্য বললেও সেখানে হচ্ছে তার উল্টো। পুলিশের কাজ সমাজের অপরাধীকে ধরা, সাংবাদিকের কাজ অপরাধ ও দুর্নীতির খবর প্রকাশ করা। সাংবাদিক পেটানো পুলিশের কাজ নয়। সাংবাদিকরা যদি অন্যায় করে আইনে তাদের বিচার হবে। মনে রাখতে হবে- বিচার করার দায়িত্ব আদালতের, পুলিশের না। আমরা বরিশালে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং জড়িতদের শুধু বিভাগীয় শাস্তি নয়, প্রচলিত আইনে তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানাই।