হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের ব্যাপারে সরকার যথেষ্ট আন্তরিক এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাঁধের কাজে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। নীতিমালায় আনা হয়েছে পরিবর্তন। কিন্তু সরকারের এসব উদ্যোগ কোনো কাজে আসবে না যদি এ বছর সোনাফসল অকাল বানের হাত থেকে রক্ষা না হয়।
ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে পিআইসি গঠন নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া বাঁধের কাজ নিয়েও অভিযোগের অন্ত নেই। অপ্রয়োজনীয় খাতেও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যেখানে বাঁধের প্রয়োজন নেই সেখানেও বাঁধ দেয়া হয়েছে। আর যেখানে বাঁধের প্রয়োজন সেখানে বাঁধ দেয়া হয়নি। গতকাল দৈনিক সুনামকণ্ঠে ‘গুরমার হাওরের একাংশ অরক্ষিত : দুশ্চিন্তায় কৃষক’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদে বলা হয়েছেÑ তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের গুরমার হাওরের একাংশ অরক্ষিত রয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের তালিকা থেকে এটি বাদ পড়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কয়েক হাজার কৃষক। জানা যায়, উপজেলার শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের দুর্লভপুর পশ্চিমবাড়ি হতে পলমাটি ভিটা পর্যন্ত গুরমার হাওরের অন্তর্ভুক্ত। দুর্লভপুর পশ্চিমবাড়ি হতে পলমাটি ভিটা বাঁধটি ইউনিয়নের চনারবিল, ধরকিত্তার দলা, ঘড়ের গাড় দলা, চাপাইতির দলা, পলমাটির কনুয়ার খাল ও হাতি ডুবা কনিয়ার বিলের বোরো ফসল রক্ষা করে। গত বছর অকাল অকাল বন্যার সময় উপজেলা পরিষদ থেকে নগদ অর্থ ও বস্তা দেয়া হয় বাঁধটি রক্ষার জন্য। পরে অবশ্য বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকে পড়ে। এবছর পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রথম যে তালিকা করে সেই তালিকায় গুরমার হাওরে বর্ধিতাংশ ছিল। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ তালিকায় বাদ পড়ে যায় দুর্লভপুর পশ্চিমবাড়ি হতে পলমাটি ভিটা বাঁধ নির্মাণ ও শরিফপুর কম্পার্টমেন্টালের দুই পাশের আফর। যদিও শরিফপুর নদীতে শুধুমাত্র বাদ দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় কৃষকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আনোয়রুল হক ও মোয়াজ্জেমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মিজবাহুল আলমকে হাওরের বাঁধ পরিদর্শন করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেন। তারা দুজনই প্রতিবেদনে, বাঁধের দক্ষিণে ১৫০০ ফুট এবং পূর্বে ৫০০ ফুটসহ মোট ২০০০ফুট কাজ সংযুক্ত করা হলে এলাকার জনগণ খুবই উপকৃত হবে বলে জানান। তাছাড়া দুর্লভপুর গ্রামের পশ্চিম প্রান্ত থেকে পলমাটি ভিটা পর্যন্ত ১কি.মি. আফর বাঁধ দেয়া খুবই প্রয়োজন বলে মন্তব্য করা হয়।
জানাগেছে, গুরমার হাওরের দুর্লভপুর, শরিফপুর, পলমাটি, মাহমুদপুর, পারাবেকই, কৃষ্টপুর, গড়াগাঁওসহ ১৫-২০টি গ্রামের কয়েক হাজার কৃষকের প্রায় কয়েক হাজার হেক্টর বোরো ফসলি জমি আছে। শরিফপুর নদীতে বাঁধ হলেও দুইপাশের আফরে কোন কাজ হয়নি। এছাড়া দুর্লভপুর পশ্চিমবাড়ি হতে পলমাটি ভিটা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়নি কোন বাঁধ। যদিও গত বছর যেসময় স্থানীয় মানুষ ফসল বাঁচানোর জন্য লড়াই করেছিলেন সেসময় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমাদের বাঁধে নগদ অর্থ ও বস্তা দিয়েছিলেন। এবছর বাঁধের জন্য সরকারি অফিসে অফিসে ঘুরেও কোন কাজ হচ্ছে না।
এমন অবস্থায় দুটি আফরসহ তিনটি জায়গায় বাঁধ না হওয়ায় গুরমার হাওরের হাজার হাজার কৃষক দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাদের ফসল নিয়ে। বাঁধ নির্মাণ না হলে ফসল রক্ষা করা কঠিন হবে। আমরা কর্তৃপক্ষকে বলতে চাইÑ দ্রুত সংশ্লিষ্ট এলাকায় বাঁধ নির্মাণ করুন। তা না হলে গুরমার হাওরে যদি ফসলহানি হয় তবে এর দায় আপনাদেরই নিতে হবে।