আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনেই রচিত হয়েছিল রাজনীতির ঐতিহাসিক মহাকাব্য। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার মুহুর্মুহু করতালির মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কার্যত স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বর্ষপরিক্রমায় সে দিনটি আবার ফিরে এসেছে বাঙালির জাতীয় জীবনে। বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে এদেশের মানুষ দলমত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে স্বাধীনতার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। সেদিন ঐক্য ও জাতীয়তাবাদ ছিল বাঙালির এগিয়ে যাওয়ার মূল প্রেরণা।
৭ মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শুধু যে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন তাই নয়, তিনি বাঙালিকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুতও করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের মধ্যেই ছিল মুক্তিযুদ্ধের দিকনির্দেশনা। ছিল বাঙালিদের প্রতি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অন্যায়-অবিচারের প্রকাশ, বাঙালিকে দমিয়ে রাখার সব ষড়যন্ত্রের মুখোশ উন্মোচন এবং সর্বশেষ তা থেকে বাঙালি জাতির মুক্তিলাভের উপায়। সব কিছুই তিনি তুলে ধরেছিলেন অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে। সত্তরের জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পরও শুধু বাঙালি বলে ক্ষমতা দিতে অস্বীকার, নানা টালবাহানা এবং সামরিক শক্তি দিয়ে বাঙালিকে দমন করার অশুভ ইঙ্গিত সবই তিনি তুলে ধরেছিলেন তাঁর সেই সংক্ষিপ্ত ভাষণে। আর সে কারণেই শুধু বাঙালিরা নয়, সেদিনের বিবেকবান বিশ্বও দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার সপক্ষে ও সমর্থনে। তাই ৭ মার্চ এবং সেদিনের সেই ঐতিহাসিক ভাষণ বাঙালি জাতির হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত। স্বাধীনতার সঙ্গে এর স¤পর্ক অবিচ্ছেদ্য।
আমাদের দুর্ভাগ্য, স্বাধীনতার পর থেকেই স্বাধীনতাবিরোধীদের ষড়যন্ত্র চলে এসেছে এ দেশে। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী যেসব ব্যক্তি দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল, তাদের আবার এই বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার বহু রকম অপচেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তারা সফল হয়নি। স্বাধীনতার চার দশক পরে হলেও স্বাধীনতাযুদ্ধে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, দেশে আজ তাদের বিচার হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন চরম সাজাও ভোগ করেছে। কিন্তু এখনো স্বাধীনতাবিরোধীরা ষড়যন্ত্রের জাল বুনে চলেছে। জঙ্গিবাদ-মৌলবাদের নামে নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। জঙ্গিবাদ-মৌলবাদকে নানাভাবে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। তাই বাঙালি জাতিসত্তার বিজয়ের লড়াইয়ে স্বাধীনতার সপক্ষের সব শক্তিকে নতুন করে মুক্তির সংগ্রামে নামতে হবে। আজ নতুন করে দেশপ্রেমের পরীক্ষা দেওয়ার সময় এসেছে। ৭ মার্চের ভাষণের মর্মকথা হৃদয়ে ধারণ করে স্বাধীনতাবিরোধী সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলার শপথ নিতে হবে।