স্টাফ রিপোর্টার ::
খনিজ মন্ত্রণালয় থেকে ইজারাপ্রাপ্ত ধোপাজান বালু মহালের ৬ ইজারাদারের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর আদেশ প্রদান করেছেন উচ্চ আদালত। ধোপাজান বালু মহালের ইজারাদার তোফাজ্জুল হোসেনের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি জুবায়ের আহমদ চৌধুরী ও বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান গত ৯ মে এই নোটিশ জারি করেন। খনিজ সম্পদের ইজারা প্রস্তাব কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবেনা এই মর্মে কারণ দর্শানোর আদেশ প্রদান করা হয়। তবে সম্প্রতি সুনামগঞ্জ সরকারি কৌসুলি উচ্চ আদালতের স্থিতাবস্থা ও নিষেধাজ্ঞার কথা অস্বীকার করে সংশ্লিষ্টদের দখলনামা প্রদান করার মতামত দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
উচ্চ আদালতের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ১৪২১-১৪২৩ বাংলা সন পর্যন্ত তোফাজ্জুল হোসেন হাইকোর্ট বিভাগে ক্ষতিগ্রস্ত ইজারাদার হিসেবে রিট পিটিশন নং ৫৪৫৯/২০১৪ দায়ের করেন। পিটিশনের প্রেক্ষিতে আদালত ২০১৪ সনের ১৭ জুন ১৪২১-১৪২৩ বাংলা সন পর্যন্ত তার ইজারা চুক্তিপত্রের উপর স্থিতাবস্থার আদেশ প্রদান করেন। ইজারাদার তোফাজ্জুল হোসেনের ভোগ দখলে যাতে কোন পক্ষ বাধা সৃষ্টি না করতে পারে সেজন্য পুনরায় রিট পিটিশন নং ৫৪৫৯/২০১৪-এ পৃথক আবেদন করলে উচ্চ আদালত ২০১৫ সনের ২৭ মে ইজারাদারের দখলে যাতে কেউ বাধা সৃষ্টি না করতে পারে সেই মর্মে স্থায়ী স্থিতাবস্থার আদেশ জারি করেন। এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ইজারাদার হিসেবে উচ্চ আদালত থেকে স্থিতাবস্থা পান তোফাজ্জুল হোসেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সনের ২৯ জুলাই তোফাজ্জুল হোসেন ৫৪৫৯/২০১৪-এ আরেকটি পৃথক আবেদন করলে আদালত ১৪২২ বাংলা সনের খাজনার আবেদন গ্রহণপূর্বক ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এদিকে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় আজাদ হোসেনসহ ৬জনকে ইজারা মঞ্জুর আদেশ প্রদান করায় এ নিয়ে বিতর্কের দেখা দেয়। এই আদেশ প্রাপ্তির পর সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ইজারাদারদের দখল বুঝিয়ে দেয়া যাবে কিনা লিখিতভাবে জানতে চান। পাশাপাশি এ নিয়ে রিট বা অন্যান্য মামলার সকল আদেশ ও স্বত্ত ৩৫/২০০৮ এর নিষেধাজ্ঞা আদেশসহ খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের এ বিষয়ে মতামত জানতে চান।
অন্যদিকে উচ্চ আদালত গত ৮/০৬/২০১৬ তারিখে তোফাজ্জুল হোসেনের ২৯/০৭/২০১৫ইং তারিখের নিষেধাজ্ঞার আদেশটি প্রত্যাহার করেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগে তোফাজ্জুল হোসেন সিএমপি ৭৮৭/২০১৬ দায়ের করলে আপিল্যাট ডিভিশনের চেম্বার জজ ‘নো অর্ডার’ আদেশ প্রদান করেন। পরবর্তীতে গত ৮/০৬/২০১৬ তারিখের প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল ২০৬৯/২০১৬ দায়ের করলে চেম্বার জজ মামলাটি গ্রহণপূর্বক শোনানীর জন্য আগামী ৩১/০৭/২০১৬ ইং তারিখ ধার্য্য করে সুপ্রীম কোর্টের আপিল্যাট ডিভিশনের পুল ব্যাঞ্চে পাঠিয়ে দেন। নিষেধাজ্ঞা ও স্থিতাবস্থা থাকার পরও সুনামগঞ্জ সরকারি কৌসুলী মো. মর্তূজা আলী খনিজ সম্পদের ইজারাদারদের দখলনামা প্রদানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বরাবরে মতামত প্রেরণ করায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
তোফাজ্জুল হোসেন বলেন, ধোপাজান নদী বালু মহালটি পাথর মহাল বলে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ১৪/০৩/২০১৩ ইং তারিখে গেজেট প্রকাশ করলে গেজেটের বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নং ৪৭৭৯/২০১৩ দায়ের করি। এই পিটিশনের প্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট স্থিতাবস্থার আদেশ প্রদান করেন। গত ০৮/০৬/২০১৬ ইং তারিখে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সুপারিনটেনডেন্ট এর স্বাক্ষরে উক্ত নম্বরের মামলাটি এখনো বিচারধীন বলে মন্তব্য করা হয়।
এদিকে গত ২০/০৬/২০১৬ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) লুৎফুর রহমানের স্বাক্ষরিত এক পত্রে সলিসিটর উইং এর কাছে যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালত সুনামগঞ্জর এর স্বত্ত মোকদ্দমা নং ৩৫/২০০৮ অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সিভিল দায়ের না হয়ে থাকলে নথি ফেরত দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। আইন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞার আদেশটি এখনো বলবৎ আছে বলেই পত্রে জানতে চাওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে সরকারি কৌসুলী মো. মর্তুজা আলী বলেন, আমি যে দুটি আদেশ পেয়েছি সেই দুটিতে কোন নিষেধাজ্ঞা এবং স্থিতাবস্থার কথা উল্লেখ ছিল না। যার ফলে আমি দখলনামা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য বলেছি। অন্য আদেশে স্থিতাবস্থা বা কোন নিষেধাজ্ঞা আছে কি না তা আমার জানা নেই।