স¤পদে ভরপুর জলাভূমির অধিকার ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেক পানি ঘোলা হয়েছে, অনেক রক্তের ধারা জলে মিশেছে। এ যুগে বিদেশি দাতা ও আন্তর্জাতিক সংস্থার পরামর্শে অনেক নীতিমালা, উন্নয়ন প্রকল্প হয়েছে। কিন্তু জেলেদের কোনো উন্নতি হয়নি। সরকারি নীতিমালায় রয়েছে খাস জলমহাল জেলেদের সমবায় সমিতিকে লিজ দেওয়ার। কাগজে-কলমে তা স্বীকৃত হলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ নেই। আর জলাভূমির ওপর প্রকৃত দখল রাখতে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারাই উপদলে বিভক্ত হয়ে লাঠালাঠি করে।
দৈনিক সুনামকণ্ঠে সম্প্রতি প্রকাশিত দুটি সংবাদ থেকে জানা যায়Ñ গত বছর যে জলমহাল দখল নিয়ে চারজনের মৃত্যুর হয়েছিল এ বছরও সেই জলমহাল দিরাই উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়নের টান্নির হাওরের গ্রুপ জলমহাল দখল নিতে গিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র দুই নেতার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে মজনু মিয়া নামের আরো এক জনের মৃত্যু হয়েছে এবং সংঘর্ষে আরো ১০ জন আহত হয়েছে।
উপজেলার টান্নি গ্রুপ জলমহালটি ধীতপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি ১৪২৪-১৪২৫ বাংলা সালের জন্য সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেয়। পরে এই জলমহালটি সাব ইজারা নেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। জলমহালটি ইজারার পরই সীমানা নিয়ে কুলঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে তাদের বিরোধ দেখা দেয়। কুলঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও তার সমর্থকরা জলমহালের একটি অংশ নিজেদের দখলীয় দাবি করলে এ নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি।
গত শুক্রবার দুপুরে জগন্নাথপুরে এলাকার একটি বিল দখল নিয়ে অনুচন্দ গ্রামের ফজলু মিয়া জিম্মাদার ও জিবিস জিম্মাদারের লোকজনের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের প্রায় ১০ রাউন্ড বন্দুকের গুলি বর্ষণ হয়। এ সময় প্রতিপক্ষের বন্দুকের গুলিতে সফু মিয়া জিম্মাদার নামের এক ব্যক্তি নিহত হন ও আহত হয়েছেন উভয় পক্ষের আরো ২০ জন।
দিরাই ও জগন্নাথপুর উপজেলার জলমহালের দখল নিয়ে সংঘর্ষে যে রক্তস্রোত বয়ে গেছে, তা সুশাসন ও সামাজিক সুস্থিতির মারাত্মক ঘাটতির এক করুণ চিত্র। সংঘর্ষের নেপথ্যে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা ও তাদের অনুসারীরা। এই প্রভাবশালীদের জীবন-জীবিকা জেলেদের মতো মাছ ধরার ওপর নির্ভর করে না। বাংলাদেশের হাওর-বাঁওর-বিল-ঝিল-জলায় তথা মিঠা পানির মৎস্যস¤পদে এই শ্রেণির প্রভাবশালীদের কেবল আঙুল ফুলে কলাগাছ হতে থাকে। মৎস্যজীবীরা মাছ ধরে মজুরি বা ভাগ পায়, তাদের দারিদ্র্য কখনোই ঘোচে না। পেটের দায়েই প্রভাবশালীদের জন্য তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে গুলি খায় ও মরে। সরকারের গৃহীত নীতি অনুযায়ী- জাল যার জলা তার। অর্থাৎ খাল নদী বিল-হাওর-বাঁওরে মাছ ধরে যারা জীবিকা নির্বাহ করেন তারাই এইসব মুক্ত জলাশয়ের অধিকার ভোগ করবেন। তারাই খাস জলাশয়সমূহের ইজারা লাভ করবেন। কিন্তু বাস্তবে এই নীতির প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায় না।
সরকারি স¤পদ দখলে নেওয়া ও শাসক দলের উপদলীয় কোন্দলে এসব বেআইনি কারবার চলছে। এসব ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কেন ভূমিকা পালন করে না, সে প্রশ্ন তোলা যায়। রাজনৈতিক পক্ষ-বিপক্ষ থাকায় মামলার তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে। তাই আমরা মনে করি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। জলমহাল নিয়ে খুনের মতো ঘটনার অবসান করতে হবে।