সুনামগঞ্জ জেলার কৃষকেরা মূলত বোরো ফসলের ওপর নির্ভরশীল। এই এক ফসলনির্ভর এ জেলার মানুষ যখন একমাত্র ফসল বোরো ধান গোলায় তুলতেও অনিশ্চয়তা আর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভোগেন, তখন কিছু বলার থাকে না। বোরো ফসল রক্ষার জন্য ফসল তোলার আগে প্রতি বছর অনেক বাঁধ নির্মাণ করতে হয়। ফসল রক্ষার এই বাঁধের পেছনে সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে প্রতি বছর। কিন্তু বাঁধ নির্মাণে গাফিলতি কিংবা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে হাওরাঞ্চলের কৃষকেরা কোনো বছরই ঠিকমতো পুরো হাওরের ফসল গোলায় তুলতে পারেন না। প্রতি বছরই তারা সর্বস্ব হারিয়ে বিপাকে পড়েন। এবারও জেলার হাওরের বাঁধ নির্মাণে গাফিলতি হচ্ছে। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও অনেক স্থান ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজই শুরু হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার কারণে বাঁধ নির্মাণ সময়মতো শুরু না হওয়ায় সঠিক সময়েও শেষ হওয়া নিয়েও সন্ধিহান। তাই সঙ্গত কারণেই এবারের বোরো ফসল গোলায় তোলা নিয়ে কৃষকদের মধ্যে আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় প্রতি বছরই হাওররক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজের বরাদ্দ নিয়ে নিয়ে কোনো না কোনো ধরনের গাফিলতি বা অনিয়ম ঘটে থাকে, আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন হাওরের কৃষকেরা।
এমনই একটি সংবাদ গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত এই সংবাদ মারফতে জানা যায়Ñ হাওররক্ষার কোনও প্রয়োজনীয়তা না থাকলেও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার দেখার হাওর রক্ষার কথা বলে অপ্রয়োজনীয় একটি বাঁধে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরের কাবিটা অনুন্নয়ন খাতে সলিমপুর-জানিগাঁও পর্যন্ত ১৫ লক্ষ ২২ হাজার ১৮৯ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই হাওরে বোরো জমি থাকা কৃষকেরা জানিয়েছেন, দেখার হাওর রক্ষায় এই প্রকল্পটির কোনও প্রয়োজনীয়তা নেই। এই সড়কটি অতীতে স্থানীয় উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ নানা প্রকল্পের মাধ্যমে এলাকাবাসীর চলাচলের জন্য মাটি ভরাটের কাজ করেছেন। গেলবারও রাস্তা হিসেবে বাঁধটিতে উপজেলা প্রশাসন কর্মসৃজন বাস্তবায়ন করেছে। এখানে অতীতে সরকারিভাবে মাটি ভরাট করার যে প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়েছে সেই প্রকল্পগুলোও ছিল রাস্তা নির্মাণ নামে। কখনো হাওররক্ষা বাঁধের নামে এখানে প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে খোদ উপজেলা প্রশাসনের প্রকল্পেও তার নাম নেই। তাই আমরা মনে করিÑ যেখানে কোনো ধরনের প্রয়োজনীয়তা ছাড়াই ফসলরক্ষা বাঁধের কথা বলে রাস্তা নির্মাণে ১৫ লক্ষ ২২ হাজার ১৮৯ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেখানে ধর্মপাশা উপজেলার ২৮টি ফসলরক্ষার বাঁধ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাইরে রাখার বিষয়টি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
প্রতি বছরই হাওরের বোরো ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে জনগণের করের টাকা যেমন অপচয় ও লুটপাট হয়, তেমনি যেনতেন প্রকারে কাজ শেষ করার কারণে কাজের মানও রক্ষা হয় না। প্রকল্প যথাযথভাবে বাস্তবায়নের সঙ্গে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির প্রশ্ন জড়িত। অথচ দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ প্রকল্পটি গ্রহণ করা থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়েই কোনো না কোনো সমস্যা দেখা যায়। আমরা মনে করিÑ জনগণের অর্থস¤পদের এ ধরনের যথেচ্ছ অবৈধ এবং অনৈতিক ব্যবহার বন্ধ করতে না পারলে বিবর্ণতা কাটানো একেবারেই দুরূহ হয়ে পড়বে। তাই আমরা মনে করিÑ শুধু সরকারের আন্তরিকতা কিংবা প্রচেষ্টাই সব কিছুতে স্বচ্ছতার ছাপ লাগাতে পারবে না; এই প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবারই সমভাবে ইতিবাচক ভূমিকা প্রয়োজন।