কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে কৃষিনির্ভর মানুষের সংখ্যা ক্রমশঃই হ্রাস পাচ্ছে। দেশে ৪৭ বছর আগে কৃষির উপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা ছিল ৮০ ভাগ, আজ তা ২৫ ভাগে নেমে এসেছে।
নির্বিঘেœ হাওরের বোরো ফসল গোলায় তোলার জন্য ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গত বছর বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন লুটপাট-দুর্নীতির কারণে ফসলহানি ঘটেছে। হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজে সংশ্লিষ্টদের অনিয়ম এবং গাফিলতির কারণে সঠিক সময়ে টেকসই বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় ঢলের প্রথম ধাক্কাতেই তা ভেঙে যায়। যা আমরা বিগত সময়ে বার বার লক্ষ করেছি। জেলার হাওরাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নসাধ রচিত হয় বোরো ফসলকে ঘিরে। কিন্তু প্রতি বছরই পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ভেঙে যায় ফসলরক্ষা বাঁধ। কৃষকের চোখের সামনেই একে একে সোনাফসল তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েন।
গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়Ñ শাল্লা উপজেলার ছায়ার হাওরে প্রতি বছর কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয় বোরো ফসল। এ হাওরের ফসলরক্ষায় বাঁধ নির্মাণ কাজ ফেব্রুয়ারি মাসের ২৮ তারিখে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত এ হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শুরুই হয়নি। যে হাওরের ফসল রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী নিজে এসে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্নের নির্দেশনা দিয়েছিলেন সে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ এখনও শুরু না হওয়ায় যেমন হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তেমনি বাঁধ বিপর্যয়ে গত বছর শতভাগ ফসল তলিয়ে যাওয়ার পর এবারো ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে গড়িমসি থাকার ফলে হওরবাসীর উদ্বেগের কারণ হয়েও দাঁড়িয়েছে।
এর আগের দিনের প্রকাশিত একটি সংবাদ থেকে জানা যায়Ñ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় না থাকা ধর্মপাশা উপজেলার ২৮টি ফসলরক্ষা বাঁধ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় এনে দ্রুত বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত কাজ বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন করেছে হাওর বাঁচাও, সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন ধর্মপাশা উপজেলা কমিটি। এবং উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক গত ৮ ফেব্রুয়ারি হাওরের বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত কাজের অগ্রগতি বিষয়ক মতবিনিময় সভায়ও বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে।
পুরো বছরজুড়ে হাওরাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা নিদারুণ অভাব-অনটন মোকাবিলা করে সামনের মওসুমে ফসল ফলানোর স্বপ্ন দেখছেন। তাদের এই স্বপ্ন আবারও যাতে দুঃস্বপ্নে পরিণত না হয় সেজন্য সকল সমস্যা দূর করে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ দ্রুত নির্মাণ করতে হবে। আমরা ফসলরক্ষা বাঁধের সুষ্ঠু কাজ দেখতে চাই, কৃষকরা কাজ দেখতে চায়। মনে রাখতে হবেÑ বাঁধ না হলে ফসল রক্ষা হবে না, আর ফসল রক্ষা না হলে কৃষক বাঁচবে না। তাই কৃষি ও কৃষক বাঁচাতে সঠিক সময়ের মধ্যে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ বাস্তবায়ন করা হোক।