শহরে সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজটের জন্য যতটা না অপ্রশস্ত রাস্তা দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায়ী ব্যাটারিচালিত অটোরিকসা। এগুলোর যত্রতত্র অবস্থানের কারণে সুষ্ঠু চলাচল যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি সাধারণ পথচারীদের স্বাভাবিক পায়ে হাঁটাও বিঘিœত হচ্ছে। এই অটোরিকসা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব যাদের, তারা এগুলোর দ্বারা সৃষ্ট সমস্যা নিরসনের ব্যাপারে ‘একেবারে উদাসীন’ এবং ‘অর্থপূর্ণ কারণে প্রায়শই নীরব’। নিষিদ্ধ ঘোষণা থাকা সত্ত্বেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নেয়ায় এই মরণযানের অবৈধ চলাচল দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত রয়েছে।
বর্তমানে সুনামগঞ্জ শহরে অটোরিকসার সংখ্যা এতোটাই বেড়েছে যে পায়ে হেঁটে রাস্তা পার হওয়াটাও দায় হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে শহরে অটোরিকসার আধিক্যে রীতিমতো আতঙ্কিত শহরবাসী। কম খরচে দ্রুত চলাচলকারী এ যানটি বর্তমানে শহরবাসীর কাছে অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিয়ন্ত্রণহীন অটোরিকসার কারণে প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে চলছে।
গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সংবাদ থেকে জানা যায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শহরের ষোলঘরে রাস্তা পারাপারের সময় ব্যাটারি চালিত অটোরিকসা মুহূর্ত দাশ নামের শিশুকে ধাক্কা দেয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় শিশু মুহূর্ত দাশকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে অবস্থার অবনতি হওয়ায় চিকিৎসকরা ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশু মুহূর্তকে রাগীব রাবেয়া মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ বাবা-মাসহ আত্মীয়-স্বজন সকলই। সড়ক দুর্ঘটনায় মুহূর্ত দাশই নয়, এর আগেও একই এলাকায় অটোরিকসার ধাক্কায় মিঠু চৌধুরী নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
যা নিষিদ্ধ তা বলবৎ থাকা স্পষ্টতই আইনের লঙ্ঘন। দেশে যে পরিবহন নিষিদ্ধ এবং ক্ষতিকারক, তা কিভাবে চলছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে তার জবাবদিহি করা উচিত। আমরা মনে করি এ অরাজকতা চলতে পারে না। এসব ইজিবাইক – ব্যাটারিচালিত অটোরিকসা চলাচল অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। এখানে কোনো ধরনের অনুক¤পা দেখানোর সুযোগ নেই। এর পেছনে যারাই জড়িত থাকুক না কেন, আইন লঙ্ঘনের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। রাস্তা থেকে এসব মরণযান তুলে দিতে হবে। এসব অবৈধ পরিবহনের কারণে দুর্ঘটনা ঘটবে, একজন বাবা তার বুকের ধন সন্তানকে হারাবে, অলিগলিসহ রাস্তায় যানজট সৃষ্টি হবে, তা মোটেই মেনে নেয়া যাবে না। আমরা মনে করি মানুষের জান-মালের নিরাপত্তায় রাস্তায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এসব ব্যাটারিচালিত অটোরিকসা বন্ধের কোনো বিকল্প নেই।