সড়ক দুর্ঘটনা প্রাকৃতিক নয়, মানবসৃষ্ট কারণ। বাংলাদেশে এমন কোনো দিন নেই, যে দিন সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে না, যেদিন সড়ক দুর্ঘটনায় সাধারণ মানুষ আহত-নিহত হচ্ছে না। রাস্তায় নামলেই যেন মৃত্যুদূত তাড়া করছে যাত্রী বা পথচারীকে। প্রতিদিনই সাধারণ মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় রক্তাক্ত হচ্ছেন। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের কাছে সড়ক দুর্ঘটনায় জীবনের অপচয় যেন নিয়তির লিখন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সন্দেহ নেই আধুনিক যুগ আমাদের গতি দিয়েছে। ইঞ্জিন আবিষ্কারের পর থেকে ভূ-উপরিতল, নদী-সাগর অথবা আকাশ সবখানেই গতিময় চলাফেরা আজ। দেশের আনাচে-কানাচে নির্মিত নতুন নতুন রাস্তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মোটরযান। সেই সঙ্গে বাড়ছে জনসংখ্যা। প্রয়োজনের তাগিদেই মানুষ নিত্যদিন যাতায়াত করছে এখানে-ওখানে।
গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠে প্রকাশিত একটি সংবাদ মারফতে জানা যায় সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রী, কন্যাসহ ৫ জনের মৃত্যুর খবর। অন্তরটা কেঁপে ওঠছে এক সঙ্গে পাঁচ জনের মৃত্যুর সংবাদে। মৃতের স্বজনরা দৌড়ে যাচ্ছেন ঘটনাস্থলে, তাদের মাতম আর আর্তনাদে কেঁপে উঠছে আকাশ-বাতাস। আমরা বিবেকবানরা আতকে উঠছি অকাল মৃত্যু-পঙ্গুর বহুমাত্রিক চিত্রে; হরহামেশাই দেখছি দুর্ঘটনার দানবীয় ধ্বংসচিত্র।
আমরা মনে করিÑ চালকদের বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানোর পাশাপাশি বিপজ্জনক ওভারটেকিং, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, গাড়ি চালানো অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোনের ব্যবহার, চালকদের মাদক সেবন ও রাস্তাঘাট নির্মাণে ত্রুটির কারণেই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। আবার যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতাও অনেক দুর্ঘটনার কারণ। তাই এ বিষয়গুলো নিয়ে যদি এখনই না ভাবা হয় তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে না। যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি চালকের সংখ্যাও বাড়ছে। কিন্তু কারা যানবাহনের স্টিয়ারিং ধরছে সে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু গাড়ি চালানো শিখলেই তাকে চালক বলা যাবে না। ট্রাফিক আইন ও সিগন্যাল, সড়কের সংকেতগুলো স¤পর্কেও একজন চালককে সম্যক জ্ঞাত থাকতে হবে। তাছাড়া প্রতিটি উপজেলা সদরেও চলাচলকারী গাড়ির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণহীন। যানবাহন চলাচলে কোনো নিয়ম-কানুন না মানায় দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। একটি পরিবারকে ঝুঁকিহীন রাখা যেমন অভিভাবকের দায়িত্ব, তেমনি দেশকে ঝুঁকিহীন রাখা সরকারের দায়িত্ব। এ ব্যাপারে সড়ক পথের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষ কার্যকর উদ্যোগ নিলে সড়ক দুর্ঘটনা ও দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর মিছিল রোধ করা সম্ভব।