ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বছরে মাত্র একবারই সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে ফসল আবাদ করা সম্ভব হয়। বৈশাখে কৃষক ফসল ঘরে তোলার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু প্রায় প্রতি বছরই অকালবন্যার কারণে কৃষকরা সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। অথবা নিলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। হাওর এলাকায় মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে পাহাড়ি ঢল ও অকালবন্যা নামে। অথচ বোরো ফসল কাটার উপযোগী হয় এপ্রিলের মাঝামাঝি। তাই ফেব্রুয়ারির মধ্যেই জেলার সকল বাঁধের কাজ সম্পন্ন করতে হয়। কিন্তু ফেব্রুয়ারির অর্ধসপ্তাহ গেলেও সম্প্রতি দৈনিক সুনামকণ্ঠে প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়Ñ ধর্মপাশা উপজেলার কাইলানী ও চন্দ্র সোনার থাল হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের ২৫ ভাগ টাকার চেক হস্তান্তর করা হলেও এখনো প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি। এবং দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ৪৮টি বাঁধের কাজ শুরু হয়নি। ফেব্রুয়ারির মধ্যে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও যেখানে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও ধর্মপাশা উপজেলার হাওরে বাঁধের কাজ শুরুই হয়নি সেখানে নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে কীভাবে?
বাঁধ নির্মাণে এ বিলম্ব আবারো ভাবাচ্ছে হাওরের কৃষকদের। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ নিয়ে সংশয় তো আছেই, বাঁধের স্থায়িত্ব নিয়েও শঙ্কায় আছেন তারা। এটা সত্য যে, হাওর এলাকায় এবার পানি নামতে দেরি হচ্ছে। অন্যান্য বছর নভেম্বর থেকেই হাওরে বোরো আবাদ শুরু হয়। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই আবাদ অধিকাংশ ক্ষেত্রে শেষ হয়ে যায়। তাই অবধারিতভাবে বোরো আবাদ এবার পিছিয়ে গেছে। বোরোর মৌসুম আগে শুরু করেই যেখানে ফসল ঘরে তোলা যায় না, সেখানে দেরিতে মৌসুম শুরু হলে কী হবে সেটা ভেবে কৃষক চিন্তিত।
এ বছর হাওরের পানি না নামার কারণেই বাঁধ নির্মাণে বিলম্ব হচ্ছে। হাওরাঞ্চলের কৃষকদের প্রত্যাশা ছিল, গত মৌসুমে ফসলহানির ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এবার নির্ধারিত সময়েই বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু হবে। কিন্তু কোনো কোনো হাওরে এবারো নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও কাজ শুরু না হওয়ায় এ নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্থায় দ্রুত কাজ শুরু করার পাশাপাশি দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার কোনো বিকল্প নেই।