বিজ্ঞানের উত্তরোত্তর উন্নতির কারণে মানুষের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতি এতটাই সুদূর প্রসারী যেÑ হৃদপি- পর্যন্ত স্থানান্তর ও পুনঃপ্রতিস্থাপন সম্ভব হয়েছে। কিন্তু মানুষ ক্যান্সার নামক মরণব্যাধির নাম শুনলে আঁতকে ওঠে। কেননা ক্যান্সারের চিকিৎসা আবিষ্কার হলেও সুনির্দিষ্ট ও সহজলভ্য সমাধান আজো আবিষ্কার সম্ভব হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, মানবদেহ যেসব রোগে আক্রান্ত হয় তার মধ্যে ক্যান্সার একটি অন্যতম ঘাতক ব্যাধি। ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রধান কারণ ধূমপান।
সারা বিশ্বে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর হার সর্বাধিক। ক্যান্সার দেহের যে কোনো জায়গায় হতে পারে। বাংলাদেশে ক্যান্সার বেশি হচ্ছে ফুসফুসে। ক্যান্সারে আক্রান্ত মানুষের ১৮ শতাংশই ফুসফুস ক্যান্সারের রোগী। দ্বিতীয় স্থানে আছে স্তন ক্যান্সার, আক্রান্তদের সাড়ে ১২ শতাংশ এর রোগী। আর লসিকাগ্রন্থির ক্যান্সার আছে তৃতীয় স্থানে। ক্যান্সারে আক্রান্তদের ৯ দশমিক ৩ শতাংশই লসিকাগ্রন্থির ক্যান্সারে ভুগছেন। সম্প্রতি হাসপাতালভিত্তিক ক্যান্সার নিবন্ধনের এক প্রতিবেদন এ তথ্য পাওয়া গেছে। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। দেশের ক্যান্সার চিকিৎসা ও গবেষণার সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিতে আসেন ১৮ হাজার ৫৫৬ জন রোগী। এদের মধ্যে ১১ হাজার ১০৮ জন ছিলেন প্রকৃতপক্ষে ক্যান্সার রোগী। এই ক্যান্সার রোগীদের ৫৫ শতাংশ পুরুষ। রোগীদের গড় বয়স ৫০ বছর। এদের বড় অংশ নিরক্ষর।
ফুসফুসের রোগ বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন যে, ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রধান কারণ ধূমপান। শহর ও গ্রামে বিপুল সংখ্যক মানুষ নিয়মিত ধূমপানে আসক্ত। এছাড়া বায়ুদূষণও ক্যান্সারের কারণ। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, কলকারখানার ধোঁয়া, নির্মাণ কাজের ধুলাবালি এবং অস্বাস্থ্যকর কর্মক্ষেত্রের কারণে মানুষ ফুসফুসের অন্যান্য রোগ ও ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা মনে করিÑ মানুষ যদি একটু সচেতন হয় তবে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে। তাই ধূমপান ও তামাক জাতীয় দ্রব্য না গ্রহণ করার জন্য ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো জরুরি। একসময় মনে করা হতো, ক্যান্সার মানেই মৃত্যু। কিন্তু এ ধারণা ভুল। ক্যান্সার যদি প্রাথমিক স্তরে উদঘাটন করা হয়, তবে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে তা নিরাময় করা সম্ভব। এ ব্যাপারেও মানুষকে সচেতন করা প্রয়োজন।