দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে প্রায় দেড় কোটি শিক্ষার্থী। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলসহ সারাদেশে সিংহভাগ দরিদ্র মানুষের সন্তানদের লেখাপড়ার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সরকারের সিদ্ধান্তে এরই মধ্যে রেজিস্টার্ড বেসরকারি অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ হয়েছে। শিক্ষার প্রসারের স্বার্থেই নেওয়া হয়েছে এই গণমুখী সিদ্ধান্ত। কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়েই শিক্ষাব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ার মতো অবস্থা। সারাদেশে বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৬৪ হাজার ৮২০টি। এর মধ্যে প্রায় ২০ হাজার স্কুলে প্রধান শিক্ষক নেই। সহকারি শিক্ষকের ১৭ হাজার পদ শূন্য রয়েছে। শিক্ষক সংকট থাকা মানেই বিদ্যালয়ের পাঠদান ব্যাহত হওয়া।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়Ñ প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তার মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শূন্য পদগুলো পূরণে নতুন নিয়োগ কার্যক্রম রয়েছে। ২০১৪ সালের স্থগিত হওয়া ১০ হাজার সহকারি শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম চলছে। এ কার্যক্রম আগামী এপ্রিলের মধ্যে শেষ করা হবে। এ নিয়োগ কার্যক্রম শেষ হওয়ার আগেই নতুন করে আরো সাত হাজার সহকারি শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার পাশপাশি চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) আওতায় রাজস্ব খাতে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন, অতিরিক্ত ক্লাসরুম তৈরি, প্রাথমিক পর্যায়ের স্কুলগুলো অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করা হবে। এসব বিদ্যালয়ে শূন্য শিক্ষক পদ, প্রয়োজন অনুযায়ী সৃষ্ট পদ, প্রাক-প্রাথমিক স্তর মিলিয়ে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেড় লাখ শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে।
আজকাল সরকারের প্রচেষ্টায় শিক্ষা বিষয়ে বিপুল জনসচেতনতা তৈরি হয়েছে। তবে, শিক্ষা বিস্তারে সাফল্যের নানা গালভরা কথা বলা হলেও শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক না থাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান হচ্ছে দায়সারাভাবে। নিয়ন্ত্রক বা প্রধান শিক্ষক না থাকায় সাধারণ শিক্ষকরাও নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী স্কুলে আসছেন-যাচ্ছেন। প্রধান শিক্ষক শূন্যতা, সহকারি শিক্ষকের অভাব আর শ্রেণিকক্ষের সংকট রেখে দেশে মানসম্মত শিক্ষার আশা করা যায় না। তাই আমরা মনে করিÑ দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষক পদে দ্রুত নিয়োগ দিয়ে শিক্ষক সংকট দূর করতে হবে। মনে রাখতে হবেÑ শিক্ষা কোনোভাবেই জোড়াতালি দেয়ার খাত নয়। এটা এমন এক ক্ষেত্র, যেখানে কোনো ঘাটতি দেখা দিলে ভবিষ্যতে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অন্যান্য খাতেও। আমরা আশা করবোÑ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক প্রশ্নে স্বয়ংস¤পূর্ণ হয়ে উঠবে।