ভালো ফলাফলের আনন্দ শিক্ষার্থীদের মনে যে ঊর্ধ্বমুখী প্রত্যাশা তৈরি করে, মনের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে না পারার বেদনা পরক্ষণেই শিক্ষার্থীদের মনে নিম্নমুখী হতাশার জন্ম দেয়। শুধু জিপিএ-৫ কেন, বাকি যারা কষ্ট, মেধা প্রয়োগ করে দু-দুটি পরীক্ষার বৈতরণী পার হন, সেই শিক্ষার্থীদের কী হবে? সব আশা-প্রত্যাশা কি থেমে যাবে? তা তো হতে পারে না। তাই এখানে দেশ-রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। যে শিক্ষার্থী শিক্ষাজীবনের সামনের উঠোনটা দেখতে পান, খানিকটা আরও সামনে যেতে চান, রাষ্ট্রের উচিত তার জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা। ডিজিটাল বাংলাদেশের যে স্বপ্নযাত্রা, একমাত্র উচ্চশিক্ষাই হতে পারে তার প্রধান মাধ্যম। কাউকে বাদ দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের এ স্বপ্নযাত্রা সম্ভব নয়, এ যাত্রায় সঙ্গী হবেন সবাই।
বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা দানে বর্তমানে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ। উচ্চশিক্ষার মান বিচারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম যেমন রয়েছে, তেমনি দুর্নামেরও ঘাটতি নেই। কিছু কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যে উচ্চশিক্ষার নামে সার্টিফিকেট বিক্রির ব্যবসা করেছে, এ কথা অপ্রিয় হলেও সত্য। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রম শুরু হয় মূলত বিগত সরকারের আমলে। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার পর এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু আইনের দোহাই দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকারকে চ্যালেঞ্জ করতে থাকে। তবে অত্যন্ত শক্ত হাতে সেই চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করেছেন বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষামন্ত্রীর কঠোর অবস্থানের ফলে অচিরেই সেগুলো যে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনেক শাখা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন অনেকটা জঞ্জালমুক্ত। তবে বিগত সরকারের অব্যবস্থাপনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মান যেভাবে নেমে গিয়েছিল, সে মান উন্নত করতে একটু সময় লাগবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানউন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে যে সমস্ত উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে তাতে আশা করা যায় অচিরেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নত হবে।
রোববার সংসদে সরকারি দলের সদস্য এম. আবদুল লতিফের এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জন্য উচ্চ শিক্ষার পথ সুগম করতে দেশের প্রতিটি জেলায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। এ কার্যক্রমের আওতায় সরকারের বর্তমান মেয়াদে ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত দেশে ৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে এবং ১৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনার অনুমতি দেয়া হয়েছে। আরও ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আইনের খসড়া চূড়ান্তকরণের কাজ চলছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা পূরণ করতে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জন্য উচ্চশিক্ষার পথ সুগম করতে দেশের প্রতিটি জেলায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটাবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।