নারী নির্যাতন যদি রোধ করা সম্ভব না হয় তবে তা একটি দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির জন্যই আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে নির্দেশ করে। বাংলাদেশে ক্রমাগত শিক্ষার হার বাড়ছে, মানুষ সচেতন হচ্ছে, আমরা সভ্য যুগে বসবাস করছি বলা হচ্ছে, কিন্তু মাঝেমধ্যে এমন নারী নির্যাতনের খবর পত্রপত্রিকায় উঠে আসে, যা আদিম বর্বরতাকেও হার মানায়।
গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানাÑ সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা রঙ্গারচর ইউনিয়নের হরিনাপাটি গ্রামে সেলিম মিয়ার কন্যা সীমা বেগমকে যৌতুক না পেয়ে শিকল দিয়ে বেঁধে নির্যাতন করেছে তার স্বামী কাওসার মিয়াসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন। বিয়ের মাস দুয়েক পর থেকেই যৌতুকসহ নানা অজুহাতে তার স্বামী কাওসার সীমা বেগমকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে আসছে। সীমা বেগম নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে শুক্রবার সন্ধ্যায় পিতার বাড়িতে চলে আসতে চাইলে কাওসার ও তার ভাই-বোনসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন মিলে গৃহবধূ সীমা বেগমকে দরজা বন্ধ করে শিকল দিয়ে বেঁধে মারধরসহ নানাভাবে নির্যাতন করে। পরে রাতে আহত গৃহবধূকে সদর হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যায় তারা। মানুষ কতটা অবিবেচক এবং ঘৃণ্য মানসিকতার হলে এভাবে একজন মানুষকে নির্যাতন করতে পারে তা আমাদের বোধগম্য নয়।
যৌতুকের লোভ যে মানুষকে কতটা পশুতে পরিণত করে এই ঘটনা তারই প্রমাণ। দেশে এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়। যৌতুকের জন্য নারীকে কতভাবে যে নিগ্রহের শিকার হতে হয় তার হিসাব নেই। অনেক ক্ষেত্রে নির্যাতন সইতে না পেরে আত্মহত্যার পথও বেছে নেয় অনেক নারী। যেখানে প্রতিবেশীদের সঙ্গে একে অন্যের সম্প্রীতি ও সহযোগিতার মাধ্যমে বসবাস করার কথা, সেখানে যদি পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছে এরকম বর্বর নির্যাতনের শিকার হতে হয়, তবে তার চেয়ে পরিতাপের ঘটনা আর কিছু হতে পারে না। আমরা মনে করি, নারী নির্যাতন শুধু বর্তমান নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্যও ভীতিকর। ফলে এই বাস্তবতা অনুধাবন করে নারী নির্যাতন রোধে পদক্ষেপ নিশ্চিত করা জরুরি।
দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন রয়েছে। এ আইন থাকা সত্ত্বেও নারী নির্যাতন কেন কমছে না। আইনের যথাযথ প্রয়োগ ঘটানোর পাশাপাশি এটাও বিবেচনা করা জরুরি, এরকম ঘৃণ্য মানসিকতা কেন জাগ্রত হচ্ছে। এটা সত্য যে, শুধু আইনের জোরে নারী নির্যাতন ও নিগ্রহ বন্ধ করা সম্ভব নয়। তাই আমরা মনে করিÑ নারী নির্যাতন রোধ করতে হলে সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং সুশিক্ষার বিস্তারও ঘটাতে হবে। আদিম বর্বরতার মতো এই সময়ে এসেও নারীরা প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হবে এমনটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাইÑ এই ঘটনাটিকে যথাযথভাবে আমলে নিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করুন। কেননা অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত না হলে তারা আরো বেশি অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠতে পারে। এটা মনে রাখা প্রয়োজন যেÑ জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারেরই দায়িত্ব। তাই সরকার নারী নির্যাতনের মতো ঘৃণ্য প্রবণতাকে যে কোনো মূল্যে দমন করতে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।