দেশে শিশু নির্যাতন থেমে নেই। ঘটে যাওয়া নানা ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হওয়ায় এসব নির্যাতন বাড়ছে। এসব ঘটনায় যথারীতি মামলা হচ্ছে, প্রতিবাদ বিক্ষোভও হচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ ঘটনাই কিছুদিন পর চাপা পড়ে যাচ্ছে। শিশুদের প্রতি এমন নৃশংসতার ভয়াবহ ঘটনা কিছুদিন পরপরই আমাদের জানতে হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে একটি সমাজে শিশুদের প্রতি মানবিক মূল্যবোধ না থাকলে সে সমাজ নিন্দনীয় হতে বাধ্য।
গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠে এমনই একটি খবরে জানা যায় যেÑ গত ২৬ ডিসেম্বর বিকেলে শহরতলির জলিলপুরের ফিরোজপুর এলাকায় ৮ বছরের কন্যাশিশু ধর্ষণ চেষ্টা চালায় জলিলপুরের সিরাজ মিয়ার ছেলে ইজিবাইক চালক সুনু মিয়া। গুরুতর অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করার পর থেকেই মামলা না করতে সুনু মিয়া ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে নির্যাতিত শিশুর পরিবারকে। তবে ঘটনার পর দিন ২৭ ডিসেম্বর ঐ শিশুকন্যার মা বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় একটি ধর্ষণ চেষ্টা মামলা দায়ের করেন। মামলা পর থেকে অভিযোগ তুলে নিতেও চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে শিশুর পরিবারকে। কিন্তু ঘটনার প্রায় দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো গ্রেফতার করা হয়নি অভিযুক্তকে। উল্টো বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। আসামি প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করলেও তাকে গ্রেফতারে গড়িমসির অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
বলার অপেক্ষা রখে নাÑ শিশু ধর্ষণ, শিশু নির্যাতন, শিশু হত্যার এই প্রবণতার জন্য মূলত আমাদের নৈতিক ও মানবিক অধঃপতন দায়ী। এই সামাজিক অবক্ষয়ের শুরু অনেক আগে থেকেই। এক সময় সামাজিক যে বন্ধন ও মূল্যবোধ ছিল, তা এখন অন্তর্হিতপ্রায়। শুধু ধর্ষণ নয়, সব ধরনের অন্যায়, অবিচার, অনাচারের বিরুদ্ধেই সামাজিক সংহতি প্রয়োজন। পুলিশের কোনো কোনো সদস্যের গাফিলতি, অসাধুতা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই।
শিশু অধিকার সংরক্ষণ করা এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। শিশুর সঠিকভাবে বেড়ে ওঠা, তার বিকাশের ক্ষেত্রে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় উদাসীনতা একেবারে কম নয়। দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, অপার সম্ভাবনা ও স্বপ্ন নিয়ে যে শিশুর নিরাপদে বেড়ে ওঠার কথা সে কেন ধর্ষণ ও নিষ্ঠুর হত্যার শিকার হবে? এর জন্য কি কেবল ব্যক্তি দায়ী? শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমাজ ও রাষ্ট্রের কি কোনো ভূমিকা নেই? আমরা মনে করিÑ মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ ও সামাজিক সুস্থতার জন্যও বিষয়টি জরুরি এবং এর কোনো বিকল্প নেই।