তুলিকা ঘোষ চৌধুরী; সুনামগঞ্জের ভাটি এলাকা জামালগঞ্জের এক ঐতিহ্যবাহী জমিদার পরিবারে তাঁর জন্ম। বাবা মৃত অমলেন্দু ঘোষ চৌধুরী, মাতা সুদীপ্তা ঘোষ চৌধুরী। চার বোন এক ভাইয়ের সবাই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত।
সিলেট-সুনামগঞ্জের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অপরিহার্য মুখ- প্রিয়দর্শিনী, মিষ্টিভাষী, বিনয়ী এই শিল্পী আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের একজন সদস্য। ১৯৯৯ সালের মে মাসে তিনি সহকারি শিক্ষক হিসেবে প্রাথমিক স্কুলে যোগদান করেন এবং সাফল্যের সাথে পাঠদান, উপকরণ তৈরি, প্রশিক্ষক ও প্রাথমিকের বিভিন্ন অনুষ্ঠান পরিচালনা, উপস্থাপনাসহ বিভিন্ন কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। আমাদের ‘মীনা মেলা’য় তাঁর তৈরি উপকরণ সকলের নজর কাড়ে।
স্কুলে পাঠদানের পাশাপাশি তিনি একজন ছাত্রকে জাতীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছেন। বলাই দাস নামের তাঁর এই ছাত্র আজ একজন প্রতিষ্ঠিত প্যাডিস্ট, ড্রামিস্ট। আক্তার হোসেন নামে একজন স্কুল ছাত্র বিভাগীয় পর্যায়ে সংগীতে শ্রেষ্ঠ স্থান লাভ করে।
তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘নৃত্যাঙ্গনে’র অনেক ছাত্রী জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে এবং সাংস্কৃতিক সফরে বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ পেয়েছে। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তাঁর ভাইপো তবলায় জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। সংগীতেও তাঁর অনেক ছাত্র-ছাত্রী জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে।
তিনি বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়ের প্রশিক্ষক, সংগীত ও পিয়ানোর জেলা প্রশিক্ষক প্রাথমিক সেক্টরের। গুণী এই শিল্পী উপজেলা শিল্পকলা একাডেমীর সহ-সভাপতি, জেলা শিল্পকলা একাডেমীর উচ্চাঙ্গ নৃত্যের প্রশিক্ষক, শিশু একাডেমীর নৃত্য প্রশিক্ষক, স্পন্দন সংগীত পরিষদের প্রশিক্ষক ও নৃত্যাঙ্গনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রশিক্ষক।
দেশে ও দেশের বাইরে বহু জায়গায় তিনি গান করেছেন। সংগীত জীবনে পেয়েছেন অনেক সম্মাননা। ১৯৮৫ সালে চট্টগ্রাম বিভাগে নজরুল সংগীতে ১ম স্থান অধিকার করেছিলেন। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সেরা ২০-এ থাকা এই শিল্পী পেয়েছেন ভারতের জলপাইগুড়িতে ডুয়ার্স সম্মাননা, ত্রিপুরা সম্মাননা, গৌহাটিতে সিলেট সম্মাননা, শিলং-এ স্মারক সম্মাননা, অদ্বৈত্বমল্ল বর্মণ সম্মাননা ব্রাহ্মণবাড়িয়া। বাংলাদেশ ধ্রুব সংগীত পরিষদে সংগীত পারিজাত উপাধি লাভ, হাছন উৎসবে রৌপ্যপদকও লাভ করেছেন তিনি।
তাঁর সিডি এ পর্যন্ত তিনটি বের হয়েছে। সুযোগ হয়েছে দেশের প্রথিতযশা বিভিন্ন গুণী শিল্পীদের সাথে গান গাওয়ার।
বিটিভি, দেশটিভি, আরটিভি, মাছরাঙা টিভি, বৈশাখী, এনটিভি, এসএ টিভিতে নিয়মিত শিল্পী এবং ভারতের তারা টিভিরও একজন শিল্পী তুলিকা ঘোষ চৌধুরী।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী’র সিলেট আগমন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গান করার পর সিলেট বিভাগের ডিডি মহোদয় তাঁকে ২০১৭ সালে সংবর্ধনা দিয়েছেন।
স্কুলে তিনি হারমোনিয়ম তবলা ও পিয়ানোর মাধ্যমে সাংস্কৃতিক কর্মকা- পরিচালনা করেন।
বর্তমানে এই গুণী শিল্পী অপ্রচলিত ধামাইল গানের সংগ্রহ ও স্বরলিপি প্রণয়নের কাজে হাত দিয়েছেন। ঐতিহ্যবাহী মামাবাড়ির এই আদুরে ভাগ্নী বিশিষ্ট সংগীত পরিবারের পুত্রবধূ সংসার এর পাশাপাশি লেখালেখিও করেন সুনিপুণ দক্ষতায়।
অসাধারণ প্রতিভা সিলেট সুনামগঞ্জের নক্ষত্র তুলিকার স্কুল ও স্কুলের বাইরে সর্বক্ষেত্রেই সফল একজন মানুষ।
আমার বিশেষ স্নেহভাজন তুলিকা। তুলিকার জন্য আমি খুবই গর্বিত। তাঁর আরও সাফল্য কামনা করি।