বাংলাদেশের নদীর সঙ্গে মানুষের জীবন-কর্মের প্রতিটি ক্ষেত্র প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। কেননা বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশে। জীববৈচিত্র্য, মৎস্য উৎপাদন, কৃষি বহুমুখীকরণ, নৌ-চলাচল, যোগাযোগ ও পর্যটন সর্বক্ষেত্রে নদীর ভূমিকা জীবনের এপিঠ-ওপিঠের মতো যেমন, তেমনি নদী ভাঙনও মানুষের সর্বনাশের কারণ হয়েও দাঁড়িয়েছে।
গত বুধবারের দৈনিক সুনামকণ্ঠে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়Ñ জগন্নাথপুর উপজেলার আশারকান্দি ইউনিয়নের বড়ফেছি মোকামের ঢালা নামক নদীর ভাঙন বেড়েই চলেছে। নদী ভাঙনের কবলে পড়ে ইতোমধ্যে একটি গ্রামীণ রাস্তা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। একটি মাজারসহ স্থানীয় জনবসতি হুমকির মুখে থাকায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রতি বছর এই মোকামের ঢালার মুখে মৌসুমি হাওর রক্ষা বেড়িবাঁধের কারণে দিন দিন নদী ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছে। নদী ভাঙনে রাস্তা বিলীন হওয়ায় জনভোগান্তি বেড়েই চলেছে। জগন্নাথপুর উপজেলার আশারকান্দি ইউনিয়নের বড়ফেছি মোকামের ঢালা নামক নদীর ভাঙন ক্রমাগত ও অপ্রত্যাশিত ভয়াবহ ভাঙনে নিরীহ মানুষজনের ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট, ফসলের মাঠ, গাছ-গাছালি, রাস্তাঘাট ইত্যাদি সব কিছু তলিয়ে নিয়ে তাদেরকে একেবারেই নিঃস্ব করে তুলছে।
বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ১০ হাজার হেক্টর আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এই বিপুলায়তন জমি নদীতে গ্রাস করে নেয়ার ফলে কতো স¤পন্ন গৃহস্থ পরিবার যে উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে, তার চিত্রটি অত্যন্ত ভয়াবহ। ফসলের জমি এবং ভিটেমাটি হারিয়ে ঐসব মানুষকে যে কি অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্গতির মধ্যে নিপতিত হতে হয়, তা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে বলার দরকার পড়ে না। সর্বনাশা নদী যে কেবল গ্রাম-জনপদ ভেঙে নিয়ে যায়, জনজীবনে টেনে আনে দুর্ভোগ এবং জীবনহানির মতো ঘটনা ঘটায় তা নয়, অনেক সমৃদ্ধ গ্রামকেও গ্রাস করে নেয়। এমন দৃষ্টান্তও আমাদের ভৌগোলিক ইতিহাসে কম নেই। তাই বাস্তবতার প্রেক্ষিতে আশারকান্দি ইউনিয়নের বড়ফেছি মোকামের ঢালা নামক নদীর ভাঙন সমস্যাটির সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার বিকল্প নেই। তাই জগন্নাথপুর উপজেলার আশারকান্দি ইউনিয়নের বড়ফেছি মোকামের ঢালা নামক নদী ভাঙন সমস্যাটিকে চলতে না দিয়ে ভাঙন রোধ করা ছাড়া অন্য পথ নেই। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ভাঙন রোধের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে এই ইউনিয়নের মানুষের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা দূর করবেন এমনটাই প্রত্যাশা।