শীত এলেই সুদূর সাইবেরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অতিথি পাখির আগমন ঘটে এ দেশে। মূলত প্রাণ বাঁচাতে ও খাদ্যের খোঁজে দেশ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের সবুজ অভয়ারণ্যে ছুটে আসে। এই অতিথি পাখি শুধু প্রকৃতির শোভাবর্ধনশীল পাখিই নয়, এগুলো আমাদের দেশের সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র্যের শোভাবর্ধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফুল ও শস্যেরক্ষেতে পোকা মাকড় এবং ইঁদুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনে। পোকামাকড় খেয়ে খেয়ে যেমন তাদের উপকার হয় ঠিক তেমনই আমাদের ক্ষেত খামারের জন্যও উপকার হয়। অতিথি পাখিরা আমাদের দেশে এসে যেমন জলজ উদ্ভিদ খেয়ে ফেলে ঠিক তেমন আমাদের জলজ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হয়। তবে শীতে সুনামগঞ্জ জেলার হাওরগুলোর জলাশয়গুলো অতিথি পাখিদের আবাসস্থল হিসেবে বিবেচিত হলেও দিন দিন অতিথি পাখিদের আত্মীয়তা গ্রহণের চাহিদা কমে যাওয়া ও পাখি শিকারের ফলে পর্যায়ক্রমে প্রতি শীতে অতিথি পাখিদের আগমনও কমে যাচ্ছে।
হাওরাঞ্চলের কিছু অসাধু মানুষ জাল কিংবা সুতার ফাঁদ পেতে, ছররা গুলি দিয়ে পাখিদের নির্মমভাবে শিকার ও হত্যা করে। পাখি শিকারিদের এই নিধনযজ্ঞে নিষ্ঠুরতায় বলি হয়ে প্রাণ হারায় অসংখ্য দুর্লভ প্রজাতির অতিথি পাখি। বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ আইন অনুসারে অতিথি পাখি শিকার ও বিক্রি করার প্রতি এক নীতিমালায় দ-নীয় অপরাধ বলে উল্লেখ থাকার পরও অতিথি পাখি শিকারের প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন। বর্তমানে জেলার হাওরগুলোয় পাখি শিকারের পাশাপাশি আহারের বিচরণ ভূমি নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর-বাঁওর, বন-জঙ্গল কমে যাওয়াও এর একটি প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রতি বছরের মতো এবারও অতিথি পাখি আসতে শুরু করেছে দেশের বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওরে। ছোট-বড় অন্য হাওরগুলোতেও অতিথি পাখির বিচরণ দেখা যাচ্ছে। তাই এখনই অতিথি পাখি নিধন বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ পাখির দেশ। প্রায় ৫৬৬ প্রজাতির পাখি এই দেশে দেখা যেত। এখন অনেক পাখি নেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাই আর দেরি না করে অতিথি পাখি নিধন বন্ধে প্রশসন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা। তাছাড়া অতিথি পাখি নিধন বন্ধে ব্যাপক সামাজিক সচেতনতাও গড়ে তুলতে হবে।