হাওরপাড়ের কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল ফলান। কৃষকের সব কষ্ট দূর হয়ে যায় গোলা ভরা ধান উঠলে। গেল বার ফসল হারিয়ে কৃষক নিঃস্ব হয়েছেন। কিন্তু তারা দমে যাননি। আবার তারা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু তারা নানা সংকটের মুখোমুখি হচ্ছেন। এই সময়ে হাওরের বেশির ভাগ জমি চাষ হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও অনেক জায়গায় পানি না নেমে যাওয়ায় তারা জমি চাষ করতে পারছেন না। এখনো অনেক কৃষিজমি ডুবে আছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এই সময়ে হাওরে ৬-৭ হাজারেরও বেশি হেক্টর বোরো জমি চাষ হয়ে যায়। কিন্তু এবছর এখন পর্যন্ত গতবারের চেয়ে অর্ধেক জমিও চাষ হয়নি।
এই নতুন সংকট নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন সুনামগঞ্জের প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কৃষক পরিবার। নিকট অতীতে তারা এমন সমস্যার মুখোমুখি হননি। সরকার পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রথম বারের মতো প্রায় ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিলেও প্রাকৃতিক কারণে বিলম্বিত পানি নিষ্কাশনের কাজ করার সুযোগ নেই। তাই কৃত্রিম কারণে যেসব হাওরের পানি নামছেনা সেসব হাওরে বিচ্ছিন্নভাবে পানি নিষ্কাশনের কাজ চলছে। যথাসময়ে বীজতলা না ভাসায় বীজতলা ছাড়াই উঁচু জমিতে বীজ ফেলেছেন কৃষক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও হাওরের কৃষকরা জানিয়েছেন, গত অক্টোবর ও নভেম্বরে জেলায় বৃষ্টিতে নতুন করে নদ-নদী ও হাওরের পানি বাড়ে। এই পানি এখনো নামছেনা। অন্যান্য বছর নভেম্বরের শুরু থেকেই বীজতলা ভেসে ওঠে। এ বছর ডিসেম্বরের ১৫ তারিখে এসেও বীজতলা ভাসেনি। কৃষি বিভাগ বড় হাওরগুলো থেকে পানি না নামায় চাষাবাদ নিয়ে শঙ্কায় আছে। জানাগেছে, বড় হাওরগুলোর মধ্যে শনি, মাটিয়ান, সোনামোড়ল, কালিকোটা, পাগনার হাওর, হালির হাওরসহ বৃহত্তম হাওরগুলো থেকে এখনো পানি নামছেনা। এসব হাওরের বীজতলা এখনো ডুবে আছে।
১ পৌষ থেকে মাঘ-মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত বোরো আবাদের মওসুম। ৪০-৪৫ দিন বয়সী চারা লাগানো হয়ে থাকে বোরো ক্ষেতে। তবে জলাশয় শ্রেণির জমিতে ২ মাস বয়সী চারাও লাগান হাওরের কৃষকরা। এবার বিলম্বে পানি নামায় বীজতলাও বিলম্বে ভাসে। ফলে ৩০-৩৫ দিনের চারা এখন হাওরে লাগাচ্ছেন কৃষক। এভাবে বিলম্বে পানি নামলে নিচু শ্রেণির জমি এবার পতিত থাকার আশঙ্কা করছেন তারা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় এবছর ২ লাখ ২২ হাজার ৫৫২ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। এ পর্যন্ত চাষ হয়েছে ৩ হাজার হেক্টরেরও কম। অন্যান্য বছর এই সময়ে ৬ হাজার হেক্টরেরও বেশি আবাদ হয়ে থাকে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
বলার অপেক্ষা থাকেনা, ফসলহারা নিঃস্ব কৃষকের সামনে এখন কঠিন সময়। বীজতলা না ভাসায় আবাদ নিয়েও তারা উদ্বিগ্ন। এমন পরিস্থিতিতে তুলনামূলকভাবে কম চাষাবাদ হবে এমনটাই মনে হচ্ছে। তবে আমরা আশা করবো, কৃষক যতটুকু ফসল ফলাবেন তার সবটুকু এবার ঘরে তুলতে পারবেন। আমরা প্রত্যাশা করিÑ হাওরের বাঁধের কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু এবং যথাসময়ে শেষ হবে। মাঠে মাঠে ফলবে সোনালী ধান। ধানের ঘ্রাণে চারদিক মাতোয়ারা হবে। হাওরের উতলা বাতাসে সোনাধান ঢেউ খেলে যাবে। কৃষক সবটুকু ফসল ঘরে তুলতে পারবে। কৃষক ন্যায্য দামে ধান বিক্রি করতে পারবে। কৃষকের মুখে আবার সোনাঝরা হাসি ফুটবে। হাওরপাড়ের কৃষি এবং কৃষক বাঁচাতে সরকার সবসময় পাশে থাকবে।