বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশে। এদেশের নদীর সঙ্গে মানুষের জীবন-কর্মের প্রতিটি ক্ষেত্র প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। জীববৈচিত্র্য, মৎস্য উৎপাদন, কৃষি বহুমুখীকরণ, নৌ-চলাচল, যোগাযোগ ও পর্যটন সর্বক্ষেত্রে নদীর ভূমিকা জীবনের এপিঠ-ওপিঠের মতো যেমন, তেমনি নদী ভাঙনও মানুষের সর্বনাশের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সংবাদ থেকে জানা যায়Ñ নদী ভাঙনে দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরের মুরাদপুর, মাছিমপুর, মংলারগাঁও, মাঝেরগাঁও বিভিন্ন গ্রামের অনেক মানুষ ভিটেমাটিহীন হয়ে বর্তমানে মাথা গোঁজার ঠাঁই করেছেন দোয়ারাবাজার-ব্রিটিশ ট্রাম্প রোডে। নদী ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে উপজেলাবাসী মানববন্ধন কর্মসূচিসহ বিক্ষোভ সভা-সমাবেশ করলেও টনক নড়ছেনা স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। বর্তমানে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়সহ সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হুমকির মুখে রয়েছে। অন্যদিকে, উপজেলার সুরমা নদীর ওপারে তিনটি ইউনিয়নের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম খেয়াঘাটটিও সুরমা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে গত সপ্তাহে।
মঙ্গলবারে একই পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায় সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৗরারং ইউনিয়নে শত বছরের পুরনো ইনাতনগর জামে মসজিদ, বসতবাড়িসহ নদী তীরবর্তী বিভিন্ন স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে। দোয়ারাবাজার ও সদর উপজেলার ইনাতনগরের নদীগুলোর ক্রমাগত ও অপ্রত্যাশিত ভয়াবহ ভাঙনে নিরীহ মানুষজনের ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট, ফসলের মাঠ, গাছ-গাছালি, রাস্তাঘাট ইত্যাদি সব কিছু তলিয়ে নিয়ে তাদেরকে একেবারেই নিঃস্ব করে তুলছে।
বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ১০ হাজার হেক্টর আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এই বিপুলায়তন জমি নদীতে গ্রাস করে নেবার ফলে কতো স¤পন্ন গৃহস্থ পরিবার যে উন্মুল-উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে, তার চিত্রটি অত্যন্ত ভয়াবহ। ফসলের জমি এবং ভিটেমাটি হারিয়ে ঐসব মানুষকে যে কি অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্গতির মধ্যে নিপতিত হতে হয়, তা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে বলবার দরকার পড়ে না। আবার, নদী এদিকে ভেঙে অন্যদিকে চর জাগালেও তাতে ভাঙন কবলিত অসহায় মানুষদের উপকারে আসে না। সে সব চর দখল করে নেয় প্রভাবশালীরা। নতুন জেগে ওঠা চরের দখল নিয়ে প্রতি বছরই আমাদের দেশে নানা স্থানে দাঙ্গা-হাঙ্গামার ঘটনা ঘটে। রক্তপাত, এমনকি জীবনহানির মতো অনাকাক্সিক্ষত পরিণতিরও শিকার হতে হয় অনেককে। সর্বনাশা নদী যে কেবল গ্রাম-জনপদ ভেঙে নিয়ে যায়, জনজীবনে টেনে আনে দুর্ভোগ এবং জীবনহানির মতো ঘটনা ঘটায় তা নয়, অনেক সমৃদ্ধ গ্রামকেও গ্রাস করে নেয়। এমন দৃষ্টান্তও আমাদের ভৌগোলিক ইতিহাসে কম নেই। তাই বাস্তবতার প্রেক্ষিতে নদী ভাঙন সমস্যাটির সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার বিকল্প নেই।
আমরা মনে করি, দোয়ারাবাজার ও ইনাতনগরসহ জেলার অন্যান্য এলাকায় নদী ভাঙন সমস্যাটিকে চলতে না দিয়ে সুপরিকল্পিত উপায়ে ভাঙন রোধ করা ছাড়া অন্য পথ নেই। এ ব্যাপারে সরকারের নীতি নির্ধারকেরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে অবিলম্বে ভাঙন রোধের কাজ শুরু করে মানুষের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা দূর করবেন Ñএমনটাই প্রত্যাশা।