(পূর্ব প্রকাশের পর)
২. ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি। তন্মধ্যে ঈমানের পরই হচ্ছে নামাজের স্থান। হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাছউদ (রা.) বলেন যে, আমি হুজুর (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, কোন আমল সব চেয়ে উত্তম? রাসুল (সা.) উত্তরে বললেন, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উত্তম আমল হচ্ছে নামাজ। একটি হাদিসে বর্ণিত আছে, নামাজ হচ্ছে ঈমান ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য। অর্থাৎ যে ব্যক্তি ঈমানদার বলে দাবি করবে তাকে অবশ্যই নামাজ পড়তে হবে। যার জীবনে নামাজ নেই তার ঈমান নেই। এ জন্যই একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি বিনাওজরে নামাজ ছেড়ে দেয়, সে যেন কুফরি করে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যতœ সহকারে প্রতিদিন আদায় করবে তাঁর এ নামাজ পরকালে নূর হবে, নাজাতের ওসিলা হবে। আর যে ব্যক্তি নামাজের পাবন্দী করে না, পরকালে তার কোন নূর থাকবে না। নাজাতের ওসিলাও থাকবে না এবং সে আল্লাহর নাফরমান ব্যক্তি যেমন ফেরাউন, হামান ও উবাই বিন খলফের সঙ্গে জাহান্নামে থাকবে। পরকালে সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব হবে। নামাজ সঠিক থাকলে অন্য আমলের ঘাটতি হলেও পার পেয়ে যাবে। আর নামাজে ঘাটতি থাকলে নাজাত পাওয়া বড় কঠিন হবে। একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- যে ব্যক্তি যথাযথভাবে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ প্রতিদিন আদায় করবে মহান আল্লাহ তাকে বিনাহিসাবে জান্নাত দান করবেন। আর যে ব্যক্তি নামাজ যথাযথভাবে নিয়মিত পড়বে না তার বিষয়ে আল্লাহর কোন ওয়াদা নেই। ইচ্ছা হলে মাফ করবেন নতুবা শাস্তি দিবেন। অন্য একটি হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি গুরুত্ব সহকারে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে মহান আল্লাহ তাকে পাঁচটি পুরস্কার দিবেনÑ ১. দুনিয়ায় রুজি-রোজগারের টেনশন দূর করে দিবেন। ২. কবরের আযাব মাফ করে দিবেন। ৩. হাশরের ময়দানে ডান হাতে আমলনামা দিবেন। ৪. পুলসিরাত যা ত্রিশ হাজার বছরের রাস্তা তা বিদ্যুৎ গতিতে পার করে দিবেন। ৫. বিনাহিসাবে জান্নাতে পৌঁছে দিবেন। সুবহানাল্লাহ।
রোজা শুধু রমজান মাসেই ফরজ। কিন্তু নামাজ কোন মাসের সাথে সীমাবদ্ধ নয় বরং সারা বছর প্রতিদিনের আমল। অনেক আছেন আবার রোজা রাখেন ঠিক কিন্তু নামাজ পড়েন না। তাদের মনে রাখা উচিত যে, রোজা হলো একটি ফরজ। এ ফরজটি পালন করার জন্য রাত ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত প্রায় ১৬-১৭ ঘণ্টা উপবাস থাকতে হয় অর্থাৎ ১৬-১৭ ঘণ্টা সময় না খেয়ে সংযমতা অবলম্বন করে রোজা পালন করে একটি ফরজ আদায় করতে হয়। অথচ প্রতি ওয়াক্তের নামাজও একটি ফরজ। আর এ ফরজটি আদায় করতে মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট ৬ ব্যয় হয়। তবুও নামাজ পড়তে গাফলতি করতে দেখা যায় অনেক মুসলমানকেই। তাই বুঝার দরকার যে, একটি ফরজ আদায় করতে যদি ১৬-১৭ ঘণ্টা ব্যয় করতে পারি তাহলে ফজরের নামাজ, জোহরের নামাজ, আসরের নামাজ, মাগরিবের নামাজ এবং এশার নামাজ যেগুলো আদায় করলে মাত্র ৫০-৬০ মিনিট ব্যয় হয় তা আদায় করবো না কেন? বিশেষ করে রমজান মাসে একটি ফরজ আদায় করলে অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায়ের সমান সওয়াব। তাহলে রমজানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে পড়ার গুরুত্ব ও ফজিলত যে কতটুকু তা আর বলার অবকাশ থাকে না। মহান আল্লাহ সকলকে নামাজের পাবন্দী করার তৌফিক দান করেন। আমিন। (চলবে)