1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ০৭:৪৩ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

২২ বছর ধরে বাঁশের খুঁটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ : ঝুঁকিতে চার গ্রামের মানুষ

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০১৬

বিশেষ প্রতিনিধি ::
দিরাই উপজেলার চারটি গ্রামে ২২ বছর ধরে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের কাজ চলছে বাঁশের খুঁটি দিয়ে। চরম ঝুঁকিপূর্ণ এ সঞ্চালন ব্যবস্থা ইতোমধ্যে কেড়ে নিয়েছে তিনজনের প্রাণ। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত হয়েছেন আরও অর্ধশতাধিক। বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে হতাহত হয়েছে বহু গবাদিপশু।
জানা যায়, ১৯৯৪ সালে দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের মধুরাপুর, ঊর্ধ্বনপুর, গনখা ও কামালপুর গ্রামের চার শতাধিক পরিবারকে বিদ্যুতের আওতায় আনে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। কোন প্রকার নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বাঁশের খুঁটি দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন টানা হয়। সেই থেকে দীর্ঘ ২২ বছর ধরে এই চরম ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ ব্যবহার করে আসছেন গ্রাম চারটির প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ।
বিদ্যুৎ সেবা প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেয়ার নামে সেই যে ‘জীবন-মরণ’ খেলা শুরু করেছিল কর্তৃপক্ষ তার উন্নয়নে অদ্যাবধি এতটুকুও উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বরং স্পর্শকাতর এই ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে ক্রমাগত গ্রাহক সংখ্যা বাড়িয়েছে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে অবস্থা এতোটাই নাজুক আকার ধারণ করেছে যে, বিদ্যুৎ নিয়ে এখানকার মানুষের মনে ভীতির সঞ্চার হয়েছে।
এদিকে, উল্টো বিদ্যুৎ সঞ্চালনের ভেঙে পড়া এই ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিচ্ছেন বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বরত এক কর্মচারী। বিদ্যুৎ বিভাগের মাস্টাররোলের কর্মচারী মিঠু এই চার গ্রামের বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কর্মকান্ডের হর্তাকর্তা। নিকট আত্মীয় আরও দুজনকে সঙ্গে নিয়ে এই কর্মচারীর বিরুদ্ধে একটি চক্র গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। মূলত, নামকাওয়াস্তের সঞ্চালন লাইন খুলে দিয়েছে তাদের ভাগ্য। ঝড়, বাতাস, বৃষ্টিতে ঘন ঘন লাইন বিকল হওয়ার কারণে এই তিন ব্যক্তির শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না গ্রাহকদের। গ্রাহকদের এই ‘দুর্বলতা’কে কাজে লাগিয়ে ‘সারাইয়ের মজুরির’ নামে ইচ্ছেখুশি মতো টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা।
অভিযুক্ত মিঠু তাঁর উপর আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারী হিসেবে গ্রাহকদের সেবা দেয়ার চেষ্টা করি। মানুষকে জিম্মি করে অর্থ হাসিলের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা মোটেই সত্য নয়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মধুরাপুর বাজার থেকে দক্ষিণ-পূর্বমুখী হয়ে চারটি গ্রামে টানা হয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় দুই কিলোমিটার লাইন। যার পুরোটাই বাঁশের খুঁটিতে। অনেক স্থানে পুরনো বাঁশের খুঁটি ভেঙে সচল তার পড়ে আছে গ্রামের রাস্তার পাশে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হেলে পড়া খুঁটির তার রয়েছে মানুষ ও গবাদিপশুর নাগালের ভেতর। কিছু কিছু ক্ষেত্রে খুঁটির বদলে গাছ দিয়ে সারা হয়েছে সঞ্চালন খুঁটির কাজ।
স্থানীয়রা জানান, ঝুঁকিপূর্ণ এ সঞ্চালন লাইনে জড়িয়ে ইতোমধ্যে গত তিন বছরে তিনজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। গত ৩০ মে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান কামালপুর গ্রামের শওকত আলী (৬৫)। বাকি নিহতরা হলেন, মধুরাপুর গ্রামের পাবেল (১০) ও জুলহাস (৩৫)। এসব মৃত্যুর ঘটনায় বিদ্যুতের প্রতি ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন গ্রামের মানুষ।
নিহত শওকত আলীর ছেলে আবু সুফিয়ান বলেন, কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে আমার পিতা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। সংশ্লিষ্টদের বিচারের পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের নিকট আমার পরিবারের ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।
মধুরাপুর গ্রামের বিদ্যুৎ গ্রাহক সুয়েব চৌধুরী বলেন, পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। এই অবস্থার উন্নতি করতে না পারলে আরও হতাহতের ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
দিরাই বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী (আরই) আওলাদ হোসেন বলেন, সুনামগঞ্জ থেকে দিরাই পর্যন্ত নতুন লাইনের কাজ চলছে। আগামী বছর নাগাদ ঝুঁকিপূর্ণ সকল লাইন পুনঃনির্মাণ করা সম্ভব হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com