মাও. মুফতি আব্দুল হক আহমদী ::
(পূর্ব প্রকাশের পর)
৯. মাহে রমজান কিয়ামুল লাইল তথা তারাবির নামাজের মাস। রমজান মাসের রাতের বিশেষ আমল হল কিয়ামে রমজান তথা বিশ রাকাত তারাবীহ। তারাবীর নামাজ আল্লাহ তায়ালার অফুরন্ত রহমত ও মাগফিরাত লাভের জন্য অন্যতম উপায়। বুখারী শরীফের একটি সহীহ হাদীসে রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে সওয়াবের আশায় রমজানের রাতে তারাবির নামাজ আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। অন্য একটি হাদীসে রাসুল (সা.) এরশাদ করেন- নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের উপর রমজানের রোজা ফরজ করে দিয়েছেন আর আমি তোমাদের উপর তারাবির নামাজকে সুন্নত সাব্যস্ত করে দিলাম। যে ব্যক্তি পূর্ণ অবস্থার সাথে রোজা রাখবে এবং তারাবির নামাজ আদায় করবে সে সদ্য ভূমিষ্ট নিষ্পাপ শিশুর মত নিষ্পাপ হয়ে যাবে। সুবহানাল্লা।
উক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণ হল তারাবির নামাজ সকল মুসলমানদের নিকট অপরিহার্য্য সুন্নত। সম্প্রতি তারাবির নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে কিছু মতানৈক্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। কেউ কেউ বলে থাকেন তারাবির নামাজ আট রাকাত। রাসুল (সা.) নাকি তারাবির নামাজ আট রাকাত পড়েছেন। এটি নিতান্তই অমূলক কথা। কারণ রাসুল (সা.) যে আট রাকাত নামাজ পড়তেন তা ছিল তাহাজ্জুদের নামাজ। আর এ নামাজটি রাসুল (সা.) রমজান মাসেও পড়তেন এবং রমজান ছাড়া অন্য মাসেও পড়তেন এবং ইহা যে তাহাজ্জুদের নামাজ তাতে কোন সন্দেহ নেই। আর তারাবির নামাজ হচ্ছে বিশ রাকাত। যা রাসুল (সা.) একাকী আদায় করতেন। পরবর্তীতে হযরত ওমর (রা.) জামাতের সাথে বিশ রাকাত তারাবির নামাজ পড়াকে চূড়ান্ত করলেন। তখন থেকেই তারাবির নামাজ জামাতে পড়া শুরু হল। আর ইহাকে উপস্থিত সমস্ত সাহাবাগণ বিনা দ্বিধায় মেনে নিলেন। তাই বিশ রাকাত তারাবির নামাজ জামাতের সাথে পড়া সাহাবাদের ঐক্যমতে সুন্নত সাব্যস্ত হল। এ কারণেই চার মাযহারের সকল ইমামগণ বিশ রাকাত তারাবির নামাজ জামাতের সাথে পড়তে বিনাদ্বিধায় সুন্নত বলে থাকেন। এতে কারো কোনো দ্বিমত নেই। তাইতো বর্তমান বিশ্বের মক্কা-মদিনাসহ তামাম পৃথিবীতে তারাবির নামাজ বিশ রাকাত পড়া হচ্ছে। যারা তারাবির নামাজ আট রাকাত বলে থাকেন তারা শরীয়তের শতসিদ্ধ একটি বিষয়কে ডিঙানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। তাই তাদের থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকে সজাগ থাকতে হবে।
১০. মাহে রমজান লাইলাতুল কদরের মাস : রমজানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শবে কদর। শবেকদর এক হাজার মাস অর্থাৎ ৮৩ বছর ৪ মাস একাধারে ইবাদত করা থেকেও উত্তম। শবে কদর রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রি সমূহের যে কোনটিতে হতে পারে। তাই আসুন শবে কদরে ইবাদত করে ৮৩ বছর ৪ মাস ইবাদতের সওয়াব অর্জন করি। (চলবে)