হাওরের ফসলহানির প্রভাব এখন শিক্ষাজীবনকে বিপন্ন করে তোলছে। হাওর এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। পরিসংখ্যানে গত বছরের তুলনায় প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় এবার অনুপস্থিতির হার বেশি লক্ষ করা গেছে। গত রোববার প্রথমদিনের পরীক্ষায় ছাত্র ও ছাত্রী মিলিয়ে সর্বমোট ৩ হাজার ৬২৬ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত। ইবতেদায়ীতে অনুপস্থিত ছিল ৫৭৯ জন। বিপুল শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতির কারণকে হাওরের ফসলহানির প্রভাব হিসেবে দেখছেন প্রাথমিক বিভাগের সংশ্লিষ্টরা।
জেলায় ফসলডুবির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক, শ্রমিক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ কাজের সন্ধানে পরিবার-পরিজন নিয়ে শহরে পাড়ি দেয়ার ফলে পরিবারের ছোট্ট সদস্য বা বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা অভিভাবকদের সঙ্গে শহরমুখী হয়েছে। তাই অনেক শিক্ষার্থীর ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বিদ্যালয়ে ফিরতে পারেনি। ফসলডুবির পরপর হাওরাঞ্চলের মানুষ যখন এলাকা ছাড়তে শুরু করে তখন থেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমতে থাকে। জীবন-জীবিকার তাগিদে এলাকায় ফিরতে না পারায় চলতি বছর জেলায় প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় ৫৫ হাজার ৭৫৯ পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন করলেও রোববার প্রথম দিনের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ছাত্র ২৩ হাজার ১৪৩ এবং ছাত্রী ২৮ হাজার ৯৫৮ জন। অনুপস্থিত ছিল ছাত্র ১ হাজার ৭৮৭ এবং ছাত্রী ১ হাজার ৮৩৯ জন। অনুপস্থিতির পরিসংখ্যানে দেখা গেছে হাওরপাড়ের শিক্ষার্থীদের আধিক্য বেশি।
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষিনির্ভর হওয়ায় কৃষক পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস হল বোরো ফসল। বোরো ফসল কেন্দ্র করেই চলে হাওর এলাকার কৃষকদের জীবন-জীবিকা। বর্তমানে কৃষক পরিবারের ঘরে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য না থাকায় সব কৃষক পরিবারই দিশেহারা। ফলে দিন দিন এর প্রভাব পড়ছে কৃষক পরিবারের শিক্ষার্থীদের উপর। তাই আমরা মনে করিÑ শুধু খাদ্য সহায়তা নয়, শিক্ষা সহায়তার ব্যাপারেও সরকারের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। এই মুহূর্তে হাওরে শিক্ষা সহায়তা না পেলে হাওরপাড়ের স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীদের লেখা পড়া হুমকির মুখে পড়বে।
আমরা মনে করি, এখনই যদি হাওরাঞ্চলে শিক্ষার্থী ঝরেপড়া রোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়া হয় তাহলে শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া সুনামগঞ্জ আরও পিছিয়ে পড়বে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপার পদক্ষেপ নেবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।