সুনামগঞ্জ জেলায় ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে ভারতীয় শিলং তীর ও দেশীয় নাইট তীর খেলা। এ জুয়াখেলা এখন শহরের পাড়া-মহল্লায় ছড়িয়ে পড়েছে। পাশাপাশি তা দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে জেলার প্রত্যন্ত এলাকায়। বয়স্ক থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীরা এই জুয়ার নেশায় মজে আছে।
সুনামগঞ্জ শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, নতুন বাসস্ট্যান্ড, আরপিননগর, উত্তর আরপিননগর, লম্বা হাটি, সাহেব বাড়ি ঘাট, তেঘরিয়া, চান্দিঘাট, মাছ বাজার, সুরমা মার্কেট, হাসন নগর, বড়পাড়া, নতুন কোর্ট পয়েন্ট, ময়নার পয়েন্ট, আমবাড়ি, ইব্রাহিমপুর এলাকাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ‘ওপেন সিক্রেট’ভাবে চলে এই তীর খেলা। স্থানীয় কয়েকজন এজেন্ট ভারতের এজেন্টদের সঙ্গে এই জুয়ার আসরের সমন্বয় করে। স্থানীয় এজেন্টরা আবার নিয়োগ করেন ‘ম্যানেজার’। খেলায় অংশ নেয়ার জন্য এই ম্যানেজারদের কাছেই নাম ও মোবাইল নাম্বার নিবন্ধন করেন খেলোয়াড়রা।
জানা গেছে, এজেন্টদের মাধ্যমে ০-৯৯ পর্যন্ত নাম্বার বিক্রয় করা হয় যেকোনো মূল্যে। লটারিতে ০ থেকে ৯৯ পর্যন্ত যেকোনো সংখ্যা কিনে নেয়া যায়। সর্বনি¤œ ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বাজি ধরা যায়। যত মূল্যে সংখ্যাটি বিক্রয় হবে তার ৭০ গুণ লাভ দেয়া হবে বিজয়ী নম্বরকে। অর্থাৎ ১০ টাকায় ৭০০ টাকা। একই নম্বর একাধিক লোকও কিনতে পারেন। সবাই কেনা দামের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি টাকা পাবেন। প্রতিদিন বিকেল সোয়া ৪টায় ও সাড়ে ৫টায় দু’বার এ লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হয়। খেলার ফলাফল দেয়া হয় অনলাইনে। ভারতের শিলং থেকে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জুয়ার আসরটি পরিচালনা করা হয়। এছাড়া দেশীয় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নাইট তীর নামেও খেলা শুরু হয়েছে। আলাদা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দেশীয় তীর সিন্ডিকেটরা এ খেলা পরিচালনা করে বলে জানাগেছে। রাত সাড়ে ১০টা ও রাত সাড়ে ১১টায় এই তীর খেলার ফলাফল ওয়েবসাইটে দেয়া হয়। শিলং তীরের মতো নাইট তীরও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে দেশের কোন জায়গা থেকে নাইট তীর পরিচালনা করা হয় তার কোনো খোঁজ মিলেনি।
এই জুয়ায় জড়িয়ে অনেকে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন। দীর্ঘদিন ধরে এই খেলা চললেও এর বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ লক্ষ করা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশের সংবিধান জুয়াকে নিষিদ্ধ করেছে। জুয়া শুধু ধর্মীয় দিক থেকেই পরিত্যাজ্য নয়; ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক নানা কারণেও এটি ক্ষতিকর একটি চর্চা। ভারতীয় শিলং তীর ও দেশীয় নাইট তীর কেন্দ্র করে জুয়ার নেতিবাচক প্রভাবও সর্বজনীন হতে বাধ্য। তাছাড়া জুয়ার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে জুয়াড়িরা সমাজে নানা ধরনের অপকর্মও ঘটাতে পারে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এমন অবস্থায় এই জুয়া বন্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।