বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ হলো শিশু। তাই শিশুদের নিরাপত্তা দিতে যেমন নাগরিক এবং সরকারের দায়িত্ব, তেমনি তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে গড়ে তোলার দায়ভারটিও সমাজের নাগরিক ও সরকারের উপরই অর্পিত হয়। মনে রাখতে হবেÑ আজকের শিশুরাই আগামী জাতি গঠনের ভিত্তি। তাই তাদেরকে ছাড়া কখনই ভবিষ্যতের বাংলাদেশ কল্পনা করা যায় না। যদি দারিদ্র্যমুক্ত ও মধ্যম আয়ের দেশ অর্জন করতে হয়, সবার আগে শিশুর উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা উভয়ক্ষেত্রে সমান নজর দিতে হবে। কিন্তু পত্রিকার পাতা খুলে যখন দেখা যায় শিশুকে অপহরণ কিংবা হত্যা করা হয়েছে, ধর্ষণ কিংবা নির্যাতন করা হয়েছে তখন আমাদের মনে বিভিন্ন প্রশ্ন জেগে ওঠে এদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে।
বড়দের মতো শিশুদেরও অধিকার রয়েছে। আর জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ সেই অধিকারের নিশ্চয়তা দিয়েছে। এখন বাংলাদেশকে তার প্রতিটি শিশুর স্বার্থে এ সমস্ত অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে। জাতীয় শিশু নীতি ও জাতীয় সুরক্ষা নীতি’র পূর্ণাঙ্গ প্রয়োগ করে সকল শিশুর মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
আমরা প্রায়শই শিশুদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার হই। তাদের নিয়ে যতো কথাই বলি না কেন, শিশুকে নিয়ে যা করণীয় তা আমরা করছি না। শিশুদের চলা ফেরায় নিরাপত্তা, লেখাপড়ার সুযোগ-সুবিধা করে দেয়া, তাদের চিকিৎসার সুব্যবস্থাসহ তাদের সকল প্রকার অভাব-অনটন থেকে দূরে রাখার জন্য আমরা কতোটুকু কাজ করছি, তা ভেবে দেখার সময় এখন। শিশু অপহরণ, শিশু ধর্ষণ, অপহরণের মাধ্যমে মুক্তিপণের অর্থ আদায় এবং শিশু হত্যাসহ শিশু সংক্রান্ত নানান খারাপ ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। ব্যক্তিস্বার্থে শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে।
আমরা জানি শিশুরা হচ্ছে সবচেয়ে নিরীহ। তারা কখনই ভালো-মন্দ বোঝে না। আমরা যারা নিজেদের সমাজের অভিভাবক মনে করি, তারা শিশুদের হত্যা, গুম, ধর্ষণ, অপহরণ নিয়ে ভাবছি না। শিশুর উপর নির্যাতনকারীদের ব্যাপারে সরকার কঠোর আইন করেছেন। কিন্তু সঠিকভাবে আইন প্রয়োগ করতে মামলার দীর্ঘসূত্রিতা, সাক্ষীদের নিরাপত্তা, প্রতিপক্ষের হুমকি ইত্যাদির ফলে মামলার বিচার কার্য থমকে দাঁড়ায়।
আমরা মনে করিÑ সরকারের পাশাপাশি সবাই যদি সচেতন হই, আলোচ্য বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখি, তাহলেই দেশ ও জাতি প্রভূত উন্নতি লাভ করতে পারবে। বাল্যবিবাহ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বর্তমান সরকার যেমন সাফল্য দেখিয়েছে, শিশুর অধিকার রক্ষায় এমন সাফল্য অর্জিত হলে তবেই বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত ও মধ্যম আয়ের দেশ অর্জন করা সম্ভব। আর তাই শিশুর প্রতি অমানবিক আচরণ রোধ করা ও শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য।