হাওর অঞ্চলের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা বহুমুখী সংকটে হাবুডুবু খাচ্ছে। ভিন্ন প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের এই জলাভূমি অঞ্চলের জন্য স্থানীয় শিক্ষাবিদ ও প্রাথমিক বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা নানা পরামর্শ-পরিকল্পনার কথা জানানোর পাশাপাশি এই অঞ্চলের জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষাবিদগণ হাওরাঞ্চলের প্রাথমিক শিক্ষার জন্য আলাদা নীতিমালার দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু যুগ যুগ ধরে সেই গুরুত্বপূর্ণ দাবি অপূর্ণই রয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে গতকাল দৈনিক সুনামকণ্ঠে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেলায় ১৪৬৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। জেলার ১৬৬টি গ্রামে এখনো কোনো বিদ্যালয়ই নেই। বিদ্যালয় পরিদর্শনের জন্য উপজেলা পর্যায়ের ৬১ জন সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা থাকার কথা থাকলেও ৩৭ জনের পদ শূন্য। প্রায় ৬০০ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। সহকারি শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ৩৯৩টি। ঝড়-তুফানে ভেঙে পড়ায় এবং চরম ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় জেলার ৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করছে। ১৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন পরিত্যক্ত। ১২৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন চরম ঝুঁকিপূর্ণ। ঝরেপড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১১.৯৫ ভাগ। তাছাড়াও এর সঙ্গে যোগ হয়েছে দুর্গম অঞ্চলে কর্মরত শিক্ষকদের (প্রায় ৭০ ভাগ নারী শিক্ষকদের) যথাসময়ে পৌঁছাতে না পারার প্রাকৃতিক বিড়ম্বিত কারণ। এই কারণে প্রায়ই হাওরের দুর্গম এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের অনুপস্থিতি লক্ষ করা যায়। তাছাড়া লোকালয়ের অধিকাংশ বিদ্যালয়ের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ নেই। বর্ষায় দ্বীপগ্রামের এসব বিদ্যালয়ে যেতে চরম বেগ পেতে হয় শিক্ষকদের। বিশেষ করে আফালের কারণে দুর্ঘটনার ভয়ে নৌকা চালকরা নৌকা চালাতে অপরাগতা প্রকাশ করে, প্রতি বছর হাওরে শিক্ষার্থীদের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি পাঠদানের ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়াও সরকারের দায়িত্ব। আমাদের শুধু শিক্ষার মান উন্নয়ন করলে চলবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নও করতে হবে। তাছাড়া সার্বিক দিক বিবেচনায় দুর্গম হাওরাঞ্চলে প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতে আলাদা নীতিমালা প্রণয়ন এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। আমরা আশাকরি, বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকার বিষয়টিকে অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে দেখবে এবং এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।