মাও. মুফতি আব্দুল হক আহমদী ::
(পূর্ব প্রকাশের পর)
৪. মাহে রমজানে দুষ্টু জ্বিন ও শয়তানদেরকে শৃংখলাবদ্ধ করা হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। মুমিন বান্দাগণ যাতে মাহে রমজানের সকল কল্যাণ লাভ করতে পারেন এবং সর্বপ্রকার অকল্যাণ-অমঙ্গল থেকে বেঁচে থাকতে পারে, সে জন্য এ মাসের প্রথম রাত্রেই দুষ্টু জ্বিন ও শয়তানকে শৃংখলে আবদ্ধ করা হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে সত্যিকারের রোজাদারগণ বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগীতে লিপ্ত হওয়ার পাশাপাশি সর্বপ্রকার অপকর্ম ও অশ্লীলতা থেকে বেঁচে থাকতে সক্ষম হয়। প্রসঙ্গত এখানে একটি প্রশ্ন হয় যে রমজানে যেহেতু শয়তানকে আবদ্ধ করে রাখা হয় তাহলে রমজানে অপকর্ম ও অশ্লীলতা সংঘটিত হয় কিভাবে? এর উত্তর হলো দু’টি। ১. যাদের দ্বারা অপকর্ম সংঘটিত হয় বাহ্যিকভাবে তারা রোজাদার হলেও সত্যিকার অর্থে তারা রোজাদার নয়। ২. রমজানে শয়তানের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও পূর্বের ১১ মাসের শয়তানির প্রভাবে রমজানেও তা সংঘটিত হয়ে যায়। যেমন একটি ফ্যান দীর্ঘক্ষণ চলতে থাকার পর যদি তার সুইচ বন্ধ করা হয় তবুও কিছুক্ষণ তা চলতে থাকে। এমনিভাবে ১১ মাস গুনাহ করার অভ্যাস থাকলে তার প্রভাবে রমজানেও কিছু কিছু গুনাহ হয়ে যেতে পারে। তবে খাঁটি অন্তরে তওবা করলে এবং রমজানের রোজা রাখলে এসব গুনাহ মাফ হয়ে যাওয়ার সুসংবাদ রয়েছে। আর এটাই হচ্ছে রমজানে জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ রাখার মর্ম।
৫. রমজান জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভের মাস : আল্লা’তায়ালা এ মাসের প্রতিরাত্রে অসংখ্য মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। একটি হাদিসে বর্ণিত আছে আল্লাহ তায়ালা রমজানের প্রতিটি রাত্রে দশ হাজার দোযখীকে মুক্তি দেন। এভাবে সারা মাসে যত পরিমাণ দোযখীদেরকে মুক্তি দেয়া হয় তার সম পরিমাণ দোযখীদেরকে রমজানের সর্বশেষ রাত্রে (ঈদের রাত্রে) মুক্তি দেয়া হয়। সুবানাল্লাহ। এতে বুঝা যায় রমজানে মুক্তি পেতে হলে রমজানের শেষ পর্যন্ত এবাদাত বন্দেগী চালিয়ে যেতে হবে। কিছুদিন রোজা রেখে, নামাজ পড়ে ছেড়ে দিলে ক্ষমা পাওয়ার আশা অনিশ্চিত। তাই রমজানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে। আর মনে রাখতে হবে রমজান পাওয়া সত্ত্বেও যার গুনাহ মাফ হবে না তার চেয়ে হতভাগা দুনিয়াতে আর কেউই নাই।
৬. মাহে রমজান দুআ কবুলের মাস : এ মাসে আল্লাহ তায়ালা রোজাদার ব্যক্তির দোয়া কবুল করে থাকেন। একটি হাদিসে আছে দিনে কিংবা রাতে প্রত্যেক রোজাদারের একটি করে দোয়া কবুল হয়! অতএব আমাদের উচিত প্রতিদিন বেশি বেশি দোয়া করা এবং ভিন্ন ভিন্ন দোয়া করা। এক্ষেত্রে মুনাজাতে মকবুলসহ অন্যান্য দোয়ার বই দেখে দেখে দোয়া করা যেতে পারে এবং নিজে রমজানের গহ্বরে আটকানো জায়িয বিষয়গুলোর জন্য দোয়া করা যেতে পারে। (চলবে)