মানুষের ঐক্য ও যৌথ প্রচেষ্টার সাংগঠনিক ব্যবস্থার নাম সমবায়। ব্যক্তি ও সমষ্টির স্বার্থে সমন্বয় ঘটিয়ে আর্থ-সামাজিক অবস্থার কাক্সিক্ষত পরিবর্তন সাধনে মানবিক প্রযুক্তি হিসেবে সমবায়ের উপযোগিতা অনস্বীকার্য। সমবায় পদ্ধতি উন্নয়নের অন্যতম কার্যকর পন্থা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন দর্শনে অন্যতম উপাদান ছিল সমবায়। তাঁর গভীর মানবিক জীবন দর্শনের লক্ষ্যই ছিল ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত বাংলাদেশ। তাঁর ভাষায়Ñ এই লক্ষ্যে যদি আমাদের পৌঁছাতে হয় তবে অতীতের সমবায় ব্যবস্থাকে আমূল পরিবর্তন করে একটি সত্যিকারের গণমুখী আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
জাতিসংঘের এক হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ৩০০ কোটি মানুষ সমবায়ের মাধ্যমে তাদের জীবনযাত্রা নির্বাহ করে। বিশ্বের ৩০০টি সমবায় প্রতিষ্ঠানের স¤পদের পরিমাণ ৩০-৪০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। আন্তর্জাতিক সমবায় মৈত্রীর হিসাব অনুসারে কানাডা, জাপান ও নরওয়েতে প্রতি ৩ জনে একজন সমবায়ী। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতে প্রতি চারজনে একজন সরাসরি সমবায়ের সঙ্গে স¤পৃক্ত। গণচীনে ১৮০ মিলিয়ন, ভারতে ২৩৬ মিলিয়ন, মালয়েশিয়ায় ৫.৪ মিলিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৯.৮ মিলিয়ন ব্যক্তি সমবায়ের সদস্য। জাপানে কৃষিকাজে নিয়োজিতদের ৯০ শতাংশ সমবায়ী। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। বাংলাদেশে সমবায় আন্দোলন আশানুরূপভাবে অগ্রগতি লাভ করেনি। সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন, নিরীক্ষা, বিরোধ নি®পত্তি, অবসায়ন, উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ, অভ্যন্তরীণ অনিয়ম ও দলীয়করণ এবং অসমবায়ীদের অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ করে আদর্শভিত্তিক সমবায় প্রতিষ্ঠান গঠনে সংশ্লিষ্টরা আশানুরূপ দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারেননি। অনেকেই সমবায়কে একটি অর্থবহ খাত হিসেবে মনে করে না এবং এ খাতে বিনিয়োগের আকর্ষণ বোধ করে না। কিন্তু এখন সময় এসেছে সমবায় আন্দোলনকে জোরদার করার। আমাদের সমবায় আন্দোলন হবে সাধারণ মানুষের যৌথ আন্দোলন, কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি জনতার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান। তাই, সমবায়ের যাদু ¯পর্শে সুপ্ত গ্রাম-বাংলাকে জাগিয়ে তুলতে হবে। আমাদের সংঘবদ্ধ জনশক্তির সমবেত প্রচেষ্টায় গড়ে তুলতে হবে ‘সোনার বাংলা’।
রাজনৈতিক স্বাধীনতা তার সত্যিকারের অর্থ খুঁজে পাবে অর্থনৈতিক মুক্তির স্বাদে, আপামর জনসাধারণের ভাগ্যোন্নয়নে। তবেই গণতান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে রূপায়িত হবে সমাজতান্ত্রিক নীতির এবং সেই অভিষ্ট লক্ষ্যে আমরা পৌঁছাবো সমবায়ের মাধ্যমে।