আমাদের দেশের প্রচলিত মূল্যবোধে শিক্ষকের মর্যাদা বাবা-মায়ের সমপর্যায়ের। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পিতৃসুলভ ভাবমূর্তির অধিকারী হবে এমনটিই দেখতে চায় শিক্ষার্থীরা। তার বদলে লাম্পট্যের বহিঃপ্রকাশ কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। অনেক ঘটনাই গণমাধ্যমে আসে না। যৌন নির্যাতনের যেসব ঘটনা ঘটছে দু’একটি বাদে তার বেশিরভাগই আড়ালে পড়ে থাকে। পারিবারিক, সামাজিক ও লোকলজ্জার ভয়ে ভুক্তভোগীরা এসব প্রকাশ করে না। বৃহস্পতিবারের দৈনিক সুনামকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিশ একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় ‘বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ ইউনিয়নের প্যারীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত মঙ্গলবার সকালে স্কুলের পাঠ কার্যক্রম শুরুর আগে তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে নতুন ভবনে ক্লাস কক্ষের সকল দরজা-জানালা খোলার কথা বলে নির্জন কক্ষে নিয়ে প্রধান শিক্ষক গোপেশ চন্দ্র দাশ মেয়েটির শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে নির্যাতন করেন এবং ছাত্রীকে এ বিষয়টি সম্পর্কে কাউকে কিছু বলতে নিষেধ করেন।’ পত্রিকার ফলোআপ সংবাদ থেকে জানা যায় ‘শিক্ষক গোপেশ চন্দ্র দাশের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে বিশ্বম্ভরপুর থানায় মামলা করা হয়। বর্তমানে তাদের দায়েরকৃত মামলাটি তুলে নিতে এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল তাদের নানা ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।’
ছোটবেলা থেকেই জেনে এসেছি যেÑ শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। বাবা-মা সন্তানের লালন-পালন করেন কিন্তু প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন শিক্ষক। মা-বাবার পরই শিক্ষকের মর্যাদা। শিক্ষাদানের পাশাপাশি শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের শিষ্টাচার, নিয়মানুবর্তিতা ইত্যাদি শিখিয়ে থাকেন। কিন্তু এমন কিছু শিক্ষক আছেন, যাঁরা এসবের ধার ধারেন না। কিছু বিপথগামী শিক্ষকের কারণে দেশের গোটা শিক্ষক সমাজ প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
অভিভাবকরা যদি সন্তানকে শিক্ষাঙ্গনে পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত হতে না পারেন, তাহলে তারা কোথায় যাবেন? শিক্ষাঙ্গনে নৈতিকতার এই অবক্ষয় ঠেকাতে আইন যথেষ্ট নয়, এ জন্য প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন। আমরা মনে করি শিক্ষক নিয়োগের সময়ে কেবল ভালো ফলাফলই নয় বরং অতীত স¤পর্কেও খোঁজখবর নেয়া প্রয়োজন। পরিস্থিতি এখন যে পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে, কারো পক্ষেই চুপ থাকার সুযোগ নেই। মনে রাখা দরকার, শিক্ষায় নৈতিকতা না থাকলে সমাজে তা আশা করা অর্থহীন। সমাজ নৈতিকতাহীন হয়ে পড়লে কেউই নিরাপদ নয়।