গণমাধ্যমে প্রায়ই খবর আসে যে, নদী-জলা, সড়ক-মহাসড়ক, স্কুলের জমি, পরিত্যক্ত ভূমি, অর্পিত-অনাগরিক সম্পত্তি সরকারের কবল থেকে ক্রমেই অবৈধ দখলদারের হাতে চলে যাচ্ছে। এসবের প্রতিকারের পরিবর্তে আবার যখন একই বিষয় ‘সরকারি বিদ্যালয় ব্যক্তির নামে বন্দোবস্ত : কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ভূমি অফিস’ সংবাদ শিরোনাম হয়ে আসে তখন বিষয়টিকে কিছুতেই খাটো করে দেখার সুযোগ থাকে না।
গত বুধবারের দৈনিক সুনামকণ্ঠে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়Ñ ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ৪৩নং নারাইনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গোটা এলাকায় শিক্ষাবিস্তারে যুগ যুগ ধরে অগ্রণি ভূমিকা পালন করছে। মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে সরকারিকরণকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যে বিদ্যালয়টি ছিল সেই বিদ্যালয়টিকে কয়েক বছর আগে কৌশলে সরকারি খতিয়ান থেকে ব্যক্তি মালিকানায় দেখিয়ে বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে। এই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভূমি ব্যক্তি মালিকানা হিসেবে বন্দোবস্ত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে জেলাজুড়েই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসে ২০১৬ সালের মে মাসে। দৈনিক সুনামকণ্ঠ এ বিষয়টি নিয়ে গত বছরের ৮ মে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করে। ওই সময় প্রশাসনিক পর্যায়ে বিষয়টির ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানা হলেও এই ‘কার্যকর পদক্ষেপ’র কোনো ইতিবাচক ফলাফল না ঘটায় তাদের দৌরাত্ম্য যে এতটুকু কমেনি, তা এই প্রতিবেদনে স্পষ্ট। এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, শিক্ষা বিষয়ে আমরা এখনো কতটা উদাসীন।
দেশের বিভিন্ন খাতের দুর্নীতির কথা এখন বহুল উচ্চারিত। ফলে এটা স্পষ্ট যেÑ শেকড়ের দুর্নীতি উচ্ছেদ না করা গেলে তা কোনো কাজে আসতে পারে না। আমরা মনে করি, নারাইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভূমির ব্যক্তির নামে বন্দোবস্ত বাতিলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
মনে রাখতে হবেÑ শিশুদের পাঠদানের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি জাতি গঠনের জন্য অতীব জরুরি, এটা মাথায় রেখে বিদ্যালয়ের বন্দোবস্ত বাতিল করতে হবে, পাশাপাশি অবৈধ দখলকৃত সরকারি অন্যান্য সম্পত্তি মুক্ত করার ক্ষেত্রেও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।