বাংলাদেশে নদী ব্যবস্থাপনা নেই বললেই চলে। দেশে বর্তমানে বালুদস্যুদের কারণে একের পর এক নদী মরে যাচ্ছে। প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে বালু তুলে নদীর দুই তীরে ভাঙন ত্বরান্বিত করছে। দেশে মানুষের জন্য এবং পরিবেশের জন্য চূড়ান্তভাবে চরম ক্ষতিকর অনেক কিছুই ঘটছে। ধোপাজান-চলতি নদী থেকে অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অনেক কিছুর মতোই দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। যার ফলে বালু তোলার জায়গায় হঠাৎ করে নদীর গভীরতা বেড়ে যায়। পানির প্রবাহ এখানে এসে ঘূর্ণিপাক সৃষ্টি করে, নদীভাঙন ত্বরান্বিত করে। তেমনি একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠ পত্রিকায়।
সংবাদ থেকে জানা যায়Ñ ধোপাজান-চলতি নদীর তীরঘেঁষে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট শেলু মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করার ফলে আদাং, জিনারপুর, পশ্চিম ডলুরা, পূর্ব ডলুরা, কাইয়েরগাঁও, বালাকান্দা, মনিপুরিঘাট, রামপুর, উড়ারকান্দাসহ ১২ গ্রামের কয়েক’শ শতক জমি ভাঙনের কবলে পড়েছে। প্রভাবশালী এ সিন্ডিকেটের তা-বে পড়ে নিজের ভিটেসহ বাড়িঘর-গাছপালা আর ফসলের জমি হারিয়েও নিঃস্ব হয়েছে অনেক পরিবার। বর্তমানে নদীর দুই তীরেই ভয়াবহ আকারের ভাঙন চলমান থাকলেও এই প্রভাবশালী সিন্ডিকেটকে থামানো যাচ্ছে না। পুলিশি অভিযানে কিছু সময় এই অপতৎপরতা বন্ধ থাকলেও পরবর্তীতে ফের এ তা-ব শুরু হয়। স্থানীয়রা অবৈধভাবে মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের ব্যাপারে একের পর এক অভিযোগ জানিয়ে আসলেও এই অব্যবস্থাপনা নিয়ে নীতিনির্ধারকদেরও কোনো মাথা ব্যথা আছে বলে মনে হয় না।
বাংলাদেশের জন্মই হয়েছে নদীবাহিত পলিমাটি দিয়ে এবং বেঁচেও আছে জালের মতো ছড়িয়ে থাকা নদীগুলোর কল্যাণে। এ কারণেই বলা হয়, নদী না বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে না। কিন্তু সেই ধোপাজান-চলতি নদী তথা বাংলাদেশকে বাঁচানোর জন্য আমরা কী করছি? আমাদের প্রশাসন কী করছে? কেন ধোপাজান-চলতি নদীর পাড়ের মানুষকে বাড়িঘর, জমিজিরেত হারানোর আশঙ্কা নিয়ে দিন কাটাতে হবে।
এই সত্যটি আমাদের মানতে হবে যেÑ পরিবেশের ওপর যত আঘাত করা হবে, তা তত বেশি পাল্টা আঘাত হয়ে ফিরে আসবে। এই নদীগুলোর নাব্যতা না থাকার কারণে একটু বেশি বৃষ্টি হলেই বন্যা-জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। ব্যাপক ফসলহানির কারণে অর্থনীতি স্থিতিশীলতা হারাচ্ছে। তাই আমরা মনে করিÑ দেশের নদীগুলোকে বাঁচাতে হলে জরুরিভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নদীর সঠিক ব্যবস্থাপনার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। ধোপাজান-চলতি নদীর মতো আরো যেসব নদীতে অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে।