বাংলাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নদ-নদীগুলোর ক্রমাগত ও অপ্রত্যাশিত ভয়াবহ ভাঙনে নিরীহ মানুষজনের ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট, ফসলের মাঠ, গাছ-গাছালি, রাস্তাঘাট ইত্যাদি সবকিছু তলিয়ে নিয়ে তাদেরকে একেবারেই নিঃস্ব করে তুলছে। আর এ সর্বনাশা নদী ভাঙনের জন্যে মনুষ্যসৃষ্ট যতো কারণ রয়েছে তার মধ্যে ক্ষমতাধর বালুদস্যু কর্তৃক নদীগর্ভ থেকে অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনই অন্যতম।
গতকালের সুনামকণ্ঠ’র একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়Ñ জগন্নাথপুর উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের কুশিয়ারা নদীর উপর প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুর কাজ শুরু হলে একটি চক্র সরব হয়ে গত কয়েক মাস ধরে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। এর আগেও জগন্নাথপুর উপজেলার এই কুশিয়ারা নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু মাটি উত্তোলন করা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উত্তোলনকৃত মাটি জব্দ করলে সিন্ডিকেটের তৎপরতা সাময়িক বন্ধ করে। তবে গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে রাতের আঁধারে কুশিয়ারা নদী থেকে বালু-মাটি উত্তোলন আবারও করে চলছে। কুশিয়ারা নদীর তীর ঘেঁষে অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে সংঘবদ্ধ চক্র প্রতিদিন রাত ১১টা থেকে ভোর পর্যন্ত কুশিয়ারা নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাইপ লাগিয়ে অবৈধভাবে বালু মাটি উত্তোলন করে সেতু কর্তৃপক্ষের কাছে বিক্রি করে অবৈধ অর্থ-স¤পদের পাহাড় গড়ছে। এদেরকে প্রতিহত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আজ অবধি কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ার ফলে চরম জনঅসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরের নদীগুলো বাঁচাতে হলে নদী খনন যেমন অপরিহার্য তেমনি অপরিকল্পিত নদী খনন করলে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটে এটিও সমান সত্য। কিন্তু স্থানীয় ক্ষমতাধর বালুদস্যুদের ড্রেজার মেশিনগুলো এই নিয়মকানুনের কোনো তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেই যাচ্ছে। আমরা মনে করিÑ এই ধারা অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে কুশিয়ারা নদীতে যে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে তা আটকানো কঠিন হবে। তাই সময় থাকতে এই বালুদস্যুদের ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া উচিত। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের দ্রুত আটক করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।