বাংলাদেশে যদি এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যেÑ প্রতি বছর হাওরাঞ্চলের কৃষকরা ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না, এর ভয়াবহতা কতটা হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এতে হাওরাঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকাই শুধু নয়, এর সামগ্রিক প্রভাব পড়বে দেশের খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে। ফলে হাওরবাসীর দুঃখ ও সামগ্রিক বিপর্যস্ত পরিস্থিতি দূর করতে হলে হাওরের কৃষি পুনর্বাসন কার্যক্রম বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই বলেই আমরা মনে করি।
এ বছর জেলায় ২ লাখ ২৩ হাজার ৮২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়। গত এপ্রিলের শুরুতে অকাল বানে তলিয়ে যায় সুনামগঞ্জে ১৫৪টি হাওরের ধান। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে নষ্ট হয় ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬১২ হেক্টর জমির ফসল। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৩ লাখ ২৫ হাজার ৯৯০ কৃষক পরিবার। সুনামগঞ্জের বোরো ফসলহারা কৃষকদের আগামী মৌসুমের ফসল উৎপাদনে সহায়তা দানের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে আগামী বোরো মৌসুমের জন্য বিনামূল্যে বীজ, সার ও নগদ অর্থ বিতরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাড়ে ৫৮ কোটি টাকার কৃষি পুনর্বাসন কার্যক্রম আগামী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণের কথা থাকলেও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি না হওয়ার কারণে যথাসময়ে এ কার্যক্রম শুরু হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আবার কয়েকটি ইউনিয়নে তালিকা তৈরির কাজ শেষ হলেও স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধিরা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের না রেখে অপেক্ষাকৃত সচ্ছলদের তালিকায় রাখছেন। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
এবার কয়েক দফা বন্যায় দেশে কৃষির ওপর আঘাত পারায় কৃষকের নানাবিধ সংকট দেখা দিয়েছে। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীরা বন্যার কারণে যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাতে তাদের জন্য সরকারি সহায়তা ভিন্ন উৎপাদনের চাকা পুনঃসচল করা দুরূহ। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা এমনিতেই উৎপাদন কাজে হিমশিম খান। হাওরের কৃষকদের বাঁচাতে আমরা মনে করিÑ যে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি তা হলো, কৃষি পুনর্বাসন কার্যক্রমের তালিকায় স্বচ্ছতা বজায় রেখে দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। মনে রাখতে হবেÑ এ ব্যাপারে আমাদের অভিজ্ঞতা কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপ্রীতিকর। দেশের কৃষক বাঁচাতে সরকারি এমন কর্মসূচি কিংবা মহৎ উদ্যোগ স্বচ্ছতা-জবাবদিহি-দায়বদ্ধতার অভাবে ভেস্তে যায় কিংবা সুফল বয়ে আনে না; দেশে এমন এ নজিরও কম নয়। যেখানে হাওরের লাখ লাখ কৃষকের জীবন-মরণের প্রশ্ন জড়িত, সেখানে প্রশাসনের আরো বেশি সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন। তাই কৃষকের তালিকা জরুরি ভিত্তিতে প্রণয়ন থেকে শুরু করে সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি বলে বলে আমরা মনে করি।