প্রকৃতিতে যা কিছু আছে, তা সম্পদ হিসেবে বিবেচ্য। এই সম্পদ সুরক্ষায় ব্যর্থ হলে প্রকৃতি তার নিয়মেই প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে। প্রকৃতিকে তার যথার্থ মূল্য দেয়া হয়না বলেই নানাভাবে তার প্রতিশোধপরায়ণতার শিকার হচ্ছি আমরা। প্রকৃতির উপাদানের ওপর যত অত্যাচার, অনাচার ও পীড়ন চলবে প্রকৃতি ততই বিরূপ হবে এবং তার প্রতিক্রিয়াও হবে তত ব্যাপক ও বিধ্বংসী।
গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠে প্রকাশিত একটি সংবাদ থেকে জানা যায়Ñ ছাতক উপজেলার পৌর শহরের বাগবাড়ি এলাকায় ‘ইংলিশ টিলা’র আশেপাশে গড়ে ওঠছে অবৈধ বসতি। টিলা কেটে ছোট ছোট টিনশেডের ঘর নির্মাণ করে এই বসতি গড়ে উঠেছে গত কয়েক বছরে। বর্তমানে ইংলিশ টিলায় আধপাকা ঘর নির্মাণ করে অনেক পরিবার থাকার পাশাপাশি স্থানীয় প্রভাবশালী ভূমিখেকোরা দখল করে নিয়েছে টিলার বেশ কিছু এলাকা। তারা নিজেদের ইচ্ছেখুশি মতো সীমানা নির্ধারণ করে পিলার ও খুঁটি পুঁতেছে।
এদিকে ইংলিশ টিলা ধসের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। বৈশাখ ও বর্ষা মৌসুম এলেই আতঙ্কের মধ্যেদিয়ে দিন কাটে ওই এলাকার বাসিন্দাদের। যেকোন সময় টিলায় ধস দেখা দিলে বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে টিলার আশপাশের এলাকারও। টিলার উপরে অবস্থিত সুউচ্চ সাহেব মিনারটির নিচের মাটি সরে যাচ্ছে। এ মিনারসহ টিলাটি ধসে পড়লে বড় ধরনের দুর্ঘটনাই ঘটে যেতে পারে।
দেশের পাহাড় ও টিলাকে আমরা লাগাতার ক্ষতি ও ধ্বংস করে যাচ্ছি। তার প্রতিফলও আমাদের ভোগ করতে হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছেÑ পাহাড় ও টিলা বিনাশ এবং ধ্বংস হওয়ার কারণে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের প্রাকৃতিক বিন্যাস ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে। এর খেসারত আরও দীর্ঘ মেয়াদে বড় আকারে দিতে হতে পারে। আমরা মনে করিÑ আশঙ্কার এ দিকটি বিবেচনায় রেখে ছাতকের এই ইংলিশ টিলা দখল, গাছপালা কর্তন, বসতি স্থাপন সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে।
মনে রাখতে হবে, ইংলিশটিল দখল, কর্তন, বৃক্ষনিধন, ঘর নির্মাণ প্রতিরোধ করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল যদি এগিয়ে না আসে, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ যদি না নেয়া হয় তবে কারো পক্ষেই টিলা ও তার পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব নয়। এই টিলা রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনের তেমন নজর আছে, বাস্তবতা দেখে মনে করার কোনো কারণ নেই। বলার অপেক্ষা রাখে না, যা কিছুই করা হোক না কেন, সবার আগে ইংলিশ টিলা দখলমুক্ত করতে হবে।
মুনষ্যসৃষ্ট সংকটে বাংলাদেশে এ বছর ১৬৫ জনের প্রাণহানির পাশাপাশি চার দশকে জীবন দিতে হয়েছে অন্তত পাঁচ শতাধিক মানুষকে। এটা অজানা নয়, টিলা দখল ও বন কেটে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করার জন্য কিছু অসাধু মানুষ দায়ী। এদের অপকর্মের ফলে প্রকৃতি সাধারণ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে প্রতিশোধ হিসেবে। ফলে টিলা ও বন কাটা, দখল রোধ ও টিলায় বসবাসের বিপক্ষে সচেতনতা তৈরিতে বিলম্ব করার কোনো অবকাশ নেই। ইংলিশ টিলা ধসে প্রাণহানি ঘটার আগেই টিলাটির দখল ও বন কাটা বন্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার পাশাপাশি টিলায় বসবাসকারীদের উচ্ছেদ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।