বাংলাদেশের অধিকাংশ তরুণ সমাজকে এখন সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করছে যে নেশা সেটা হলো ইয়াবা। ইয়াবা-মাদকে জড়িত হয়ে আমাদের অনেক তরুণ-তরুণী বিভিন্ন গর্হিত অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এমনকি নেশা করতে করতে একসময় ইয়াবা ব্যবসা ও অন্যান্য অনৈতিক কাজে জড়াতেও পিছপা হচ্ছে না তারা। তরুণ সমাজের নৈতিক অবক্ষয় রোধ করতে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা মনে করি, অপরাধী যত প্রভাবশালী হোক, আইন মোতাবেক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে। অন্তত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নেয়ার কোনো উপায় নেই।
দেখা যাচ্ছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সুনামগঞ্জে মাদক হিসেবে ইয়াবার আগ্রাসন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। সরকারি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে বর্তমানে মাদকাসক্ত মুক্ত হতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর মধ্যে ৮০ শতাংশ ইয়াবায় আসক্ত। ইয়াবার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান চললেও এর আগ্রাসন থেমে নেই। শহর থেকে গ্রামাঞ্চল সর্বত্র যেভাবে ইয়াবার জাল ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে আতঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। দেশের বিরাট সংখ্যক তরুণশক্তি নিয়ে যে রাষ্ট্র স্বপ্ন দেখছে, অথচ প্রতিনিয়ত ইয়াবার নেশায় ধ্বংস হচ্ছে তারুণ্য, জাতির ভবিষ্যৎ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইয়াবা একটি ভয়ংকর মাদক। এটি খেলে সাময়িকভাবে উদ্দীপনা বেড়ে যায়, কিন্তু এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হেরোইনের চেয়েও ভয়াবহ। ইয়াবা সেবনে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, নিদ্রাহীনতা, খিঁচুনি ও মস্তিষ্ক বিকৃতি দেখা দিতে পারে; সমস্যা হতে পারে ফুসফুস ও কিডনিতে। অর্থাৎ যে কেউই নিয়মিত ইয়াবা সেবনে অথর্বে পরিণত হবে। আমরা মনে করিÑ তারুণ্যগ্রাসী এই ইয়াবার বিস্তার এখন জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত।
অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হিসেবে যেভাবে সমাজে অপরাধের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাতে অভিভাবকরা যেমন শঙ্কিত তাদের সন্তানদের নিয়ে, তেমনি দেশের সচেতন প্রত্যেক মানুষ অজানা এক আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। মাঝে মাঝে দু-একজন মাদক ব্যবসায়ী ধরা পড়লেও এ ব্যবসার মূল হোতারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। আমরা মনে করিÑ প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এ ব্যবসার আড়ালে যারা দেশ ও জাতির সর্বনাশ ঘটিয়ে চলছে তাদের যে কোন মূল্যে প্রতিহত করতে হবে। যতবড় ক্ষমতাধরই হোক না কেন এদের সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে।
ইয়াবার আগ্রাসন থেকে তরুণ-তরুণীদের রক্ষা করতে কেবল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই হবে না; সন্তানদের প্রতি পিতা-মাতার বিশেষ নজর রাখতে হবে। তারা কোথায় যায়, কী করে, কার সঙ্গে সময় কাটায় এসব পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সন্তানকে যথেষ্ট সময় দিলে এবং তার নৈতিক শিক্ষা নিশ্চিত করা হলে তারা এ নেশাতে জড়াবে না বলে আশা করা যায়। ইয়াবার লাগাম টেনে ধরতে জনসচেতনতার পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারি জরুরি।