বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার বেশির ভাগই বাস করে গ্রামে। সাধারণত গ্রামীণ জনগোষ্ঠী হতদরিদ্র এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এই গ্রামীণ জনগোষ্ঠী বিচারপ্রাপ্তির জন্য উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হতে গিয়ে নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয়। মামলা নি®পত্তি করতে দীর্ঘদিন চলে যায়। এ সময়ের মধ্যে যাতায়াত, হাজিরাসহ অন্যান্য খরচ প্রাসঙ্গিক মিলে সময়ের সঙ্গে প্রচুর অর্থও ব্যয় হয়।
গ্রামাঞ্চলের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিরোধ স্থানীয়ভাবে নিষ্পত্তির জন্য ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় যে আদালত গঠিত হয় সে আদালতকে গ্রাম বলে আদালত। কম সময়ে, অল্প খরচে, ছোট ছোট বিরোধ দ্রুত ও স্থানীয়ভাবে নি®পত্তি করাই গ্রাম আদালতের উদ্দেশ্য। স্থানীয়ভাবে পল্লী অঞ্চলের সাধারণ মানুষের বিচার প্রাপ্তির কথা বিবেচনায় নিয়ে স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে ১৯৭৬ সালে প্রণিত হয় গ্রাম আদালত অধ্যাদেশ। এটি সংশোধন আকারে আবারও ২০০৬ সালে পাস করা হয়। পরে জাতীয় সংসদে গ্রাম আদালত (সংশোধন) আইন ২০১৩ পাস হলে গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
গ্রাম আদালতে বিচার প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকতা মাত্র; সমাধান হয় বন্ধুত্বসুলভভাবে। কিন্তু বর্তমানে লক্ষ করা যাচ্ছে যে গ্রাম আদালত আছে ঠিকই কিন্তু এর কার্যকারিতা তেমন নেই। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে গ্রাম আদালতের কার্যক্রমও পরিচালিত হচ্ছে না। ফলে কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত গ্রামাঞ্চলের বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষ। কিন্তু এই অবস্থা চলতে দেয়া যায় না। গ্রাম আদালতকে কার্যকরী করতে হলে এর বিচার প্রক্রিয়া ও সুফল সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ক্যাস্পেইন, প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহের মাধ্যমে বিচার কাজ পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতা প্রদান, সংশ্লিষ্টদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, নিয়মিত পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি নারীর অংশ গ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি, প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কারসহ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সময়োপযোগী অ্যাডভোকেসি উদ্যোগ গ্রহণ করার ব্যবস্থা করতে হবে। মানুষের দোরগোড়ায় ব্যাপকভাবে এর সুফল পৌঁছে দিতে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।