বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং জনজীবনকে সতেজ ও সচল রাখতে দেশে নদীগুলো পালন করছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে নদীকে বাদ দিয়ে কল্পনা করা যায় না কৃষি ও মৎস্যপুষ্টির কথা। পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রেও নদ-নদীর রয়েছে অতুলনীয় ভূমিকা। কিন্তু অযত্ন-অবহেলা এবং দখন-দূষণে আজ বিপন্ন হয়ে পড়েছে এসব নদ-নদী। খনন না হওয়ায় দেশের প্রধান প্রধান নদ-নদীতে জেগে উঠেছে অসংখ্য চর। হাওর অঞ্চল দেশের অন্যতম সম্ভাবনার দেশ। আর হাওর অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার একমাত্র মাধ্যম নদীপথ, দিন দিন নদীপথ চরম হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে।
বিভিন্ন সংবাদপত্রে মাধ্যমে জানা যায়Ñ বন্যারোধে সুনামগঞ্জের সুরমা, রক্তি, কালনী, বৌলাই, যাদুকাটা, কংস ও কুশিয়ারাসহ হবিগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ১৬টি নদী খননের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। হাওর উন্নয়নের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সুনামগঞ্জসহ হাওরবেষ্টিত সাত জেলায় বন্যারোধে মোট ১৬টি নদী খনন করবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন অধিদফতর (বিআইডব্লিউটিএ)।
নদী খনন করে গভীরতা বাড়ানো হলে নদীগুলোর পানির প্রবাহ বাড়বে। ফলে কৃষিজমি ও বন্যার পানিতে লোকালয় ডুবে যাওয়ার শঙ্কা কমে আসবে। পাশাপাশি নৌপথে পণ্য পরিবহন, মাছ চাষ ও ওই সব জেলায় কৃষিকাজে সেচ সুবিধা বাড়বে। সম্প্রতি ওই সব এলাকায় ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে হাওর এলাকার নদী খননের যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা প্রশংসার দাবি রাখে।
আমরা মনে করিÑ দেশের নদ-নদীগুলোতে বিশাল বিশাল চর সৃষ্টি ও তলদেশ ক্রমশ ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে যে নাব্যতার সঙ্কট দেখা দিয়েছে তাতে অর্থমূল্যে ক্ষতির পরিমাণটা কয়েক হাজার কোটি টাকা হবে। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা- সচল ও অব্যাহত রাখার স্বার্থেই নৌপথের নাব্যতা বজায় রাখতে হবে। আমাদের স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য নদী খননের উদ্যোগকে সব ধরনের বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবেÑ নদী খননের কাজটি একটি বিশেষায়িত কাজ। এটি সঠিকভাবে না হলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। প্রযোজ্য জায়গার পরিবর্তে অপ্রয়োজনীয় স্থানে খনন করা হলে নদী তীরবর্তী অঞ্চল অকাল ভাঙনের শিকার হতে পারে। তাই হাওরাঞ্চলের উন্নয়নে নদী খননের সঠিক পরিকল্পনা ও সুষ্ঠু বাস্তবায়ন চাই।