মানুষের জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে আশার প্রদীপ হয়ে যে প্রতিষ্ঠানটির অধিষ্ঠান- তার নাম হাসপাতাল। প্রতিদিন অজ¯্র রোগী আরোগ্য লাভের আশায় বিভিন্ন হাসপাতাল-স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার প্রয়োজনে ভিড় জমায়। তাদের মধ্যে দরিদ্র শ্রেণির লোকজনই বেশি। সংকটাপন্ন অবস্থায় তারা যদি প্রয়োজনীয় সেবা না পায়, তাহলে দুর্ভোগের কোনো শেষ থাকে না। সবচেয়ে বড় কথা, অনেক রোগীকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কাক্সিক্ষত চিকিৎসাসেবা না পেলে তাদের অসহায় বোধ করাটাই স্বাভাবিক। রোগীদের এ অসহায়ত্ব ঘোচানোর দায়িত্ব থেকে সরকার মুক্ত নয়। বিভিন্ন অজুহাতের দোহাই দিয়ে সরকার এ দায়িত্ব কিছুতেই এড়াতে পারে না।
রোগীদের এ অসহায়ত্ব ঘোচাতে যে সব ডাক্তারকে গ্রামে পোস্টিং দেয়া হয় তাদের বেশিরভাগই গ্রামে যেতে চরম অনীহা প্রকাশ করে। এতে ¯পষ্ট বোঝা যায় যে তাদের মধ্যে সেবার মানসিকতা একেবারেই নেই। সরকারি ডাক্তারদের গ্রামে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার নির্দেশ দিয়েছেন। তার ফল কতটুকু হয়েছে তা বলাই বাহুল্য।
সুনামগঞ্জ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে এত বেশি সমস্যা ও অব্যবস্থাপনা বিরাজ করছে, যা বলে শেষ করা যাবে না। জেলায় ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ২২টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে এক হাজার ৯০২টির মধ্যে শূন্য রয়েছে ৯০৭টি পদ। স্বাস্থ্য বিভাগের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিক্যাল অফিসার, সিনিয়র-জুনিয়র কনসালট্যান্ট, সার্জন মিলিয়ে ২৫০ জন ডাক্তার স্থলে কর্মরত আছেন মাত্র ৮৭ জন। ডেপুটি সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, সিনিয়র-জুনিয়র কনসালট্যান্ট, আবাসিক চিকিৎসক, আবাসিক ফিজিশিয়ান ও সার্জন, মেডিক্যাল অফিসার, ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার, সহকারি রেজিস্ট্রার, প্যাথলজিস্ট, রেডিওলজিস্ট, অ্যানেসথেটিস্ট ও ডেন্টাল সার্জন, নার্সসহ বিভিন্ন বিভাগের বেশির ভাগ পদও দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। জরুরি মেডিক্যাল অফিসার ৬৫ জনের মধ্যে শূন্য রয়েছে ৩৮টি পদ। নার্সের পদ শূন্য রয়েছে ১৫৫টি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ২৭ জন ল্যাব টেকনোলজিস্টের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র দু’জন। মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (রেডিওগ্রাফি) ১৩ জনের মধ্যে ১১টি পদই শূন্য। ফার্মাসিস্ট ৪৮ জনের মধ্যে পদ শূন্য ৪৩টি। শুধু সেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত পদই নয়, প্রশাসনিক পদগুলোর বেশির ভাগই শূন্য রয়েছে। অন্যদিকে লোকবল না থাকলেও সদর হাসপাতালসহ অন্য ৮টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উন্নত যন্ত্র সরবরাহ করার পরও লোকের অভাবে সেই যন্ত্রপাতিগুলো বাক্সবন্দি রয়েছে। এতে যে জেলার বিপুলসংখ্যক মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
দেশে উচ্চবিত্তের জন্য চিকিৎসা সুবিধা বাড়ছে। একের পর এক তৈরি হচ্ছে অত্যাধুনিক বেসরকারি হাসপাতাল। কিন্তু নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির চিকিৎসা ব্যবস্থায় কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে না। চিকিৎসা ব্যয় কম থাকায় সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো সাধারণ মানুষের প্রধান ভরসা। কিন্তু এগুলোতে জনবল সংকট থাকায় চিকিৎসা সেবার মান এতটাই নি¤œমুখী যে, মানুষ নিরুপায় না হলে সহজে সেদিকে পা বাড়াতে চায় না। প্রয়োজনের সময় চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে না পারলে এসব হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছে কেন? যাদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে এসব হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছে, তারাই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আমরা মনে করিÑ সরকার যদি স্বাস্থ্যখাতের দিকে মনোযোগী না হয় তবে কোনোভাবেই দেশের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যাবে না। কাক্সিক্ষত স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত রাখতে হলে জনবল সংকটসহ অন্যান্য সমস্যার দ্রুত সমাধান করা উচিত। সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে জনবল সংকট দূর করে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, সুন্দর পরিবেশ এবং মানসম্মত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন Ñএটাই আমাদের প্রত্যাশা।