বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রই নাগরিকদের জীবন-মৃত্যুর দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক। রাষ্ট্র চাইলে আইনত জীবন নিতে পারে, কিন্তু নাগরিকদের জীবন রক্ষার ক্ষেত্রে দায়িত্বে অবহেলার কোনো সুযোগ রাষ্ট্রের নেই।
গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের প্রকাশিত একটি সংবাদ থেকে জানা যায়Ñ বুধবার সন্ধ্যায় ফতেপুর ইউপির কাটাখালি গ্রামের জাসদ মিয়ার ছেলে তানভীর কাটাখালি গ্রাম সংলগ্ন নদীর পানিতে ডুবে যায়। পরে স্বজনরা শিশুটিকে মুমূর্ষু অবস্থায় বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগে কোনো চিকিৎসককে না পেয়ে জরুরি বিভাগের বিছানায় শিশুটিকে রেখে মা, বাবা বার বার চিৎকার করছিলেনÑ ডাক্তার কই, ডাক্তার কই। হাসপাতালে যেয়ে প্রায় ১৫ মিনিট অবস্থান করে এদিক-ওদিক মুঠোফোনে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপস্থিত না থাকায় একজন ওয়ার্ড বয় শিশু তানভীরের বুকে আস্ত করে চেপে চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু যখন শিশুটি মারা যায় তারপর দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক উচ্ছ্বাস দাশ এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান যে- কিছু সময় আগে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। এ শোক, এ বেদনা তানভীরের স্বজনদের কাছে দুঃসহ হিসেবেই প্রতিভাত হয় বৈকি। অবশ্যই রাষ্ট্রের পক্ষে প্রতিটি নাগরিককে ব্যক্তিগতভাবে দেখভাল সম্ভব নয়। কিন্তু রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যারা দায়িত্ব নেন, তারা যদি তাদের দায়িত্ব পালন না করেন বা তাদের কারণে নাগরিকদের জীবন যদি বিপন্ন হয় তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের ওপর বর্তায় না?
এ কথা অকপটেই বলতে হয়Ñ চিকিৎসা ব্যবস্থা বেহাল হয়ে পড়েছে; রোগীদের দুর্ভোগ অসহনীয় হয়ে উঠেছে। চিকিৎসা সেবা দরিদ্র্য মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। রোগীদের অসহায় অবস্থা, স্বজনদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আমাদের স্বাস্থ্যখাতের অব্যবস্থাপনা, অবহেলা ও জবাবদিহিতার অনুপস্থিতিকেই প্রকট করে তুলেছে। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, ধনী ব্যক্তিরাও অর্থের বিনিময়ে সুচিকিৎসা পান না দেশের নামিদামি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোর কাছ থেকে। তাই বাধ্য হয়ে যাদের অর্থের সংগতি আছে তারা বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। কিন্তু দেশের গরিব মানুষের তো যাওয়ার মতো বিকল্প জায়গা নেই।
আমরা মনে করিÑ স্বাস্থ্যখাতে দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠায় এ জিম্মি অবস্থার অবসান হওয়া দরকার। সেবার বদলে রাজনীতি এ জায়গা থেকে চিকিৎসকদের বেরিয়ে আসা দরকার। চিকিৎসকের দায়িত্ব অবহেলার বদলে মানবসেবার মনোভাব নিশ্চিত করার মাধ্যমে যাচ্ছেতাই অবস্থার ইতি ঘটাতে হবে। সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে চিকিৎসকদের মানসিকতা বদলাতে হবে। সেবার মনোভাব নিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে অসুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।