আজকের শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। তাদের হাতেই ন্যস্ত হবে আগামীর নেতৃত্ব। তারাই ভবিষ্যতে সমাজ, দেশ ও বিশ্ব পরিচালনায় নেতৃত্ব দেবে। সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে এগিয়ে নেবে অনন্য উচ্চতায়। এ জন্য তাদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। শিশুরা স্নেহ-মমতা, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনায় সমৃদ্ধ হলে আগামী দিনের বিশ্বে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং বিশ্ব হয়ে উঠবে সুন্দর ও শান্তিময়।
শিশু অধিকার সূচকে ১৬৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৭তম। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র ভুটানের অবস্থান বাংলাদেশের ওপরে। জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী ০-১৮ বছরের কম বয়সী প্রতিটি মানবসন্তানই শিশু। বাংলাদেশে জাতীয় শিশুনীতি অনুযায়ী ০-১৪ বছরের সব মানবসন্তানই শিশু।
অনুসমর্থনকারী দেশ হিসেবে জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ বাস্তবায়নে সরকার দায়বদ্ধ। কিন্তু শিশু অধিকার সনদের আলোকে বাংলাদেশে ‘জাতীয় শিশুনীতি, ২০১১’ ঘোষিত হলেও দুঃখজনক বাস্তবতা যে এখনো শিশুদের নিরাপদে বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করা যায়নি। শিশুর মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে দেশে যে শিশুবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা জরুরি, নানা পদক্ষেপ গ্রহণ সত্ত্বেও নানা প্রতিবন্ধকতায় তা বার বার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আমরা মনে করিÑ বাংলাদেশে শিশুবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে নীতিনির্ধারকদের দুর্বলতা ও শিশুদের প্রতি উদাসীনতাই মূলত অন্যতম প্রতিবন্ধক।
শিশুর বাসযোগ্য বিশ্ব বিনির্মাণ আমাদের স্বপ্ন। শিশুদের পরিপূর্ণ বিকাশে তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি তাদের মাঝে দেশপ্রেম ও মানবিক গুণাবলির উন্মেষ ঘটাতে শিশুদের শারীরিক, মানসিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশে পুষ্টি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও বিনোদনের বিকল্প নেই।
আমরা মনে করি, শুধু আইন প্রণয়নই নয়; পরিবার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে শিশুর অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করা জরুরি। শিশুর সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা ও অধিকার সংরক্ষণের মাধ্যমে একটি সৎ, দেশপ্রেমিক ও কর্মক্ষম ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সরকারের যতœশীল ও সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি পরিবার থেকেও শিশুর ওপর নজর রাখতে হবে। কারণ অনেক সময় সঙ্গদোষে শিশুরা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা অনস্বীকার্য, যা শিশু আইনেও উল্লেখ করা হয়েছে।
আজকের শিশু আপনার-আমার ও দেশের ভবিষ্যৎ। সারাদেশে আজ বুধবার থেকে জাতীয় শিশু সপ্তাহ পালন করা হবে। তাই আসুন, আমরা শিশু বিকাশে গড়ে তুলি সুরক্ষিত পরিবেশ। এগিয়ে আসি শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশের জন্য। শিশুদের সব অধিকার বাস্তবায়ন করে, তাদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দিয়ে সুন্দর পৃথিবী বিনির্মাণে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসিÑ এটাই হোক প্রত্যয়।