ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা বাংলাদেশে সরকারিভাবে নিষিদ্ধ হলেও সারাদেশে লাখ লাখ এসব ঝুঁকিপূর্ণ পরিবহন চলছে। একশ্রেণির প্রভাবশালীদের আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে এসব যানবাহন অবাধে চলাচলের সুবিধা পাচ্ছে। দেশে ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা নিষিদ্ধ করা সত্বেও তা যেমন বন্ধ হয়নি, তেমনি প্রতিদিনই নতুন নতুন ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা নামছে। হালকা ও ধীরগতির রিকশা যখন ইঞ্জিনের মাধ্যমে গতিবৃদ্ধি করা হয়, তখন তা দুর্ঘটনায় পড়তে বাধ্য। কারণ বডির ভারসাম্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই ইঞ্জিন বসাতে হয়। বর্তমানে যেসব ইজিবাইক ও ব্যাটারি রিকশা চলছে, এগুলো পুরোপুরি ভারসাম্যহীন। ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। দ্রুত চলতে গিয়ে ভারসাম্য হারিয়ে উল্টে যাচ্ছে এবং মানুষ হতাহত হচ্ছে। কোনো কোনো সড়কে অদক্ষ চালকের কারণে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনার খবর আমরা পাই।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, বাংলাদেশে এখন প্রায় আট লাখ ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা নির্বিঘেœ চলাচল করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখের সামনে দিয়ে চলাচল করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ব্যবস্থা না নেয়ার ফলে অবৈধ কাজটি দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত রয়েছে। এসব ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশার ব্যাটারি চার্জ দিতে গিয়ে প্রতিদিন দেশে ৫শ থেকে ৭শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিড থেকে বেরিয়ে হয়ে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সংকটকে তীব্র করে তুলেছে। নিষিদ্ধ ও ক্ষতিকর এই যানবাহন বন্ধে কোনো উদ্যোগ না থাকায় তা এখন বড় সংকটে পরিণত হয়েছে। এসব পরিবহনের ব্যাটারি চার্জ দিতে গিয়ে একদিকে যেমন বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে, অন্যদিকে সরকারও বিপুল অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে।
বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, সারাদেশের বিভাগীয় শহর, জেলা-উপজেলা সদরসহ প্রায় প্রতিটি রাস্তায় দেখা যাচ্ছে প্রচুর পরিমাণে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, অটোরিকশা ও রিকশা। বিদ্যুতের অপচয় রোধে এসব যানবাহন চলাচলে ব্যবস্থা নিলেও আমদানি বা বিক্রির ব্যাপারে জানে না বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ। এর কারণ, এগুলোর পেছনের শক্তি ক্ষমতাসীন দলের একশ্রেণির প্রভাবশালীদের অবৈধ আয়ের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যে ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা দেশে নিষিদ্ধ তা প্রশাসনের নাকের ডগায় চলাচল করা ¯পষ্টতই আইনের লঙ্ঘন। ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা অবাধে চলাচল থেকে বোঝা যায়, আইনের প্রয়োগ নেই। যে পরিবহন নিষিদ্ধ এবং ক্ষতিকারক, তা কিভাবে চলছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে তার জবাবদিহি করা উচিত। এসব ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। যারাই এর পেছনে জড়িত থাকুক না কেন, আইন লঙ্ঘনের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমরা মনে করিÑ ইজিবাইক ও ব্যাটারি চালিত রিকশা আমদানি পুরোপুরিভাবে বন্ধ করতে হবে।