অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ক্ষমতার পরিমাপক ভূমি। অতীত থেকেই আমাদের দেশে ঘটে চলছে এই ভূমি বেদখল হওয়ার ঘটনা। দেশে জমি, জলা, জঙ্গল-এর সাথে মানুষের স¤পর্কের সমীকরণে বড় বিচ্যুতি আছে। খাস জমি যে যেভাবে পারছে দখল করছে। এই জমি দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়; রয়েছে দেশজুড়ে তাদের বিশাল জনবল। কিন্তু তারা রক্ষা করতে পারছে না এই জবরদখলকৃত জমি। আবাদযোগ্য কৃষি ও অকৃষি লাখ লাখ একর সরকারি জমি বেদখল হয়ে আছে। জেলায় জেলায় এমন কি শহরেও প্রভাবশালীরা এই জমি বেদখল করে রেখেছে। শহরে ও মফস্বলে অনেক ভূমিহীন পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে। সমাজপতিরা সরকারি জমি দখলে রাখার সঙ্গে সঙ্গে ভূমি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিবিড় স¤পর্ক বজায় রাখে। দেশের খাস জমি সরকারের নিয়ন্ত্রণে না থাকায় প্রতি বছর সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠে প্রকাশিত এক সংবাদ থেকে জানা যায়Ñ দোয়ারাবাজারে সরকারি খাসজমি ও নদীর চর দখল করে বসত-বাড়িসহ অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠেছে। বাংলাবাজার ও নরসিংপুর ইউনিয়নের মরাগাঙ্গ, চেলা, মরাচেলা ও চলতি নদীর চর দখল করে বাড়িঘরসহ অসংখ্য স্থাপনা গড়ে উঠলেও স্থানীয় প্রশাসন এগুলো উচ্ছেদে ব্যবস্থা না নেয়ার ফলে প্রভাবশালী দখলদাররা বাড়ি-ঘর নির্মাণ করে নির্বিঘেœ বসবাস করছেন। এতে শুধু কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পদই বেহাত হচ্ছে না, নদীর ¯্রােতধারা ও গতি পরিবর্তনে সৃষ্ট ভাঙনের ফলে ঢলের তোড়ে উজান থেকে নেমে আসা বালুতে ফসলি জমি ভরাট হচ্ছে। আর সে কারণেই ফসলি জমি ক্রমশ চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে উঠছে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন হাট-বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে ও নদীর তীর এবং চরে সরকারি জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে দখলদাররা বেচাকেনাসহ মালিকানা প্রতিষ্ঠা করলেও প্রশাসনের টনক নড়েনি।
সরকারি স¤পদ লুটপাটের এই মহোৎসব বন্ধে সরকারের সদিচ্ছাই আসল। অতীত থেকে চলে আসা এই ধারার অবসান ঘটাতে হলে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে ওঠে সরকার প্রণীত আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে।
দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার ও নরসিংপুর ইউনিয়নের মরাগাঙ্গ, চেলা, মরাচেলা ও চলতি নদীর ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, প্রতি বছর উজান থেকে আসা পলিমাটিতে নদীর বুক ক্রমশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে বলা হয় নদীমাতৃক দেশ। অথচ দেশের অধিকাংশ নদীই বর্তমানে মরণদশায় উপনীত হয়েছে। যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক বিকাশের প্রতীকরূপে বিবেচিত হওয়া দেশের নদীগুলো বাঁচাতে দ্রুত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ খাস জমি রক্ষার ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি মরাগাঙ্গ, চেলা, মরাচেলা ও চলতি নদীর চর দখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন Ñএটাই আমাদের প্রত্যাশা।