সুনামগঞ্জ পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন ৪৩টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে চিকিৎসক সংকটে স্বাস্থ্যসেবা না মেলার যে খবর শুক্রবার দৈনিক সুনামকণ্ঠে প্রকাশ হয়েছে তা দুর্ভাগ্যজনক হলেও অভিনব নয়। বস্তুত রাজধানী ঢাকার বাইরের চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসকের অনুপস্থিতি নিয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে নানা সময়ে অসন্তোষ, হুঁশিয়ারি ও পদক্ষেপ সত্ত্বেও পরিস্থিতি যে তথৈবচ; জেলার ৪৩টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রর কেন্দ্রগুলোর অর্ধেকেরও বেশি পদ শূন্য থাকার ফলে তৃণমূলের মা ও শিশুরা ন্যূনতম সেবা না পাওয়াই তার খ-চিত্র মাত্র।
সংবাদে বলা হয়েছে, এই পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালনাধীন ৪৩টি কেন্দ্রে সর্বমোট ১ হাজার ৪৮ জনের পদ রয়েছে। এর মধ্যে ৪২৩টি গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য রয়েছে। কেন্দ্র পরিচালনার জন্য একজন মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল এসিসট্যান্ট, ফার্মাসিস্টসহ গুরুত্বপূর্ণ পদ রয়েছে। এসব পদগুলো দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। কেন্দ্রের ৪২টি এফডব্লিভিএর পদও শূন্য। অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ১২ জনের মধ্যে ৩জনের পদ শূন্য রয়েছে।
২০১৪ সনে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সুনামগঞ্জ জেলায় প্রায় ৯৫ জন ডাক্তার নিয়োগ দিয়েছিল। অধিকাংশ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ওই সময় ডাক্তার দেয়া হয়। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী তারা দুই বছর কর্মএলাকায় কাজ করার কথা থাকলেও নিয়োগ পাবার পরই এলাকায় কোন সেবা না দিয়ে তারা তদ্বির করে বদলি হয়ে গেছেন। যে কয়েকজন কিছুদিন কাগজে-কলমে দায়িত্বে ছিলেন তাদের দেখা পায়নি সাধারণ মানুষ। এখন ওই কেন্দ্রগুলোতে একজন ডাক্তারও নেই। নেই কোন ফার্মাসিস্টও। তাই সাধারণ লোকজন বিশেষ করে মা ও শিশুরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকার ভোগের ক্ষেত্রেও সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হয় দরিদ্ররা। দরিদ্র জনগোষ্ঠী কেবল অধিকার বঞ্চিতই নয়, এক কথায় বলা চলে অধিকার লুণ্ঠিত ও লাঞ্ছিত।
দুঃখের সাথে বলতে হয় দেশের সাধারণ মানুষের ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবাও জোটে না। জুটবে কী করে? মফস্বল এলাকার সরকারি হাসপাতালগুলোতে কেবল নাই নাই দশা। অধিকাংশ সময় চিকিৎসকই থাকে না। প্রয়োজনীয় ওষুধও নাই। আয়া বুয়া নার্স আর ওয়ার্ডবয় দিয়ে চলে চিকিৎসা সেবা। নানা অজুহাতে হাসপাতালে না গিয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিস নিয়ে ব্যস্ত থাকেন চিকিৎসকরা। বেতনের সময় হলে বেতন তোলেতে হাসপাতালে যান। চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকারের একটি। প্রয়োজনের সময় চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে না পারলে এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো গড়ে তোলা হয়েছে কেন? যাদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে, তারাই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা আশা করিÑ সরকারি এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর চিকিৎসক সংকট দূর করে তৃণমূলের নারী ও শিশু সেবা সহজতর করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।