ধোপাজান-চলতি নদীর তীর ঘেঁষে অবৈধ উপায়ে মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করায় পরিবেশের জন্য এবং চূড়ান্তভাবে মানুষের জন্য চরম ক্ষতিকর অনেক কিছুই ঘটছে। এ রকম আরো অনেক কিছুর মতোই দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে নদী থেকে অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। এতে বালু তোলার জায়গায় হঠাৎ করে নদীর গভীরতা বেড়ে যায়। পানির প্রবাহ এখানে এসে ঘূর্ণিপাক সৃষ্টি করে, নদীভাঙন ত্বরান্বিত হয়। তেমনি একটি খবর এসেছে গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠ পত্রিকায়। সংবাদ পাঠে জানা যায়Ñ ধোপাজান-চলতি নদীর তীর ঘেঁষে অবৈধ উপায়ে মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। এর ফলে নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো তীব্র ভাঙনের মুখে পড়েছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন এলাকায় দেখা দিচ্ছে ভাঙন। স্থানীয়রা এ ব্যাপারে অভিযোগ জানিয়ে আসার পর বুধবার ধোপাজান নদীতে সাঁড়াশি অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন। এ অভিযানে বালু উত্তোলন কাজে নৌযান নীতিমালা লঙ্ঘনকারী ৭টি নৌকা আটক করা হয়। অভিযানে ৭ জনকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে পৃথকভাবে মোট ১ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকার অর্থদ- প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশে নদী ব্যবস্থাপনা নেই বললেই চলে। একের পর এক নদী মরে যাচ্ছে। প্রভাবশালীরা নদী ভরাট করে স্থাপনা তৈরি করছে। বালু তুলে নদীর দুই তীরে ভাঙন ত্বরান্বিত করছে। এই অব্যবস্থাপনা নিয়ে নীতিনির্ধারকদেরও কোনো মাথা ব্যথা আছে বলে মনে হয় না। অথচ বাংলাদেশের জন্মই হয়েছে নদীবাহিত পলিমাটি দিয়ে এবং বেঁচেও আছে জালের মতো ছড়িয়ে থাকা নদীগুলোর কল্যাণে। এ কারণেই বলা হয়, নদী না বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে না। ধোপাজান-চলতি নদীকে বাঁচানোর জন্য জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয় মানুষ। তাদের মতে এ ধরনের অভিযান নিয়মিত পরিচালনা করলে নদীভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পাবে গ্রামগুলো।
এই সত্যটি আমাদের মানতে হবে যেÑ পরিবেশের ওপর যত আঘাত করা হবে, তা তত বেশি প্রত্যাঘাত হয়ে ফিরে আসবে। নদীগুলোর নাব্যতা না থাকায় একটু বেশি বৃষ্টি হলেও বন্যা-জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। ব্যাপক ফসলহানির কারণে অর্থনীতি স্থিতিশীলতা হারাচ্ছে। তাই নদীর সঠিক ব্যবস্থাপনার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। ধোপাজান-চলতি নদীর মতো আরো যেসব নদীতে অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, তা অবিলম্বে বন্ধে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে।