বার্ধক্য হলো জীবনের শেষ একটি পর্যায়। মানবজীবনে এই পর্যায়ে সব মানুষই বার্ধক্যে উপনীত হয়। এই পর্যায়ে একজন প্রবীণ ব্যক্তি নানা রকম শারীরিক মানসিক, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হন এবং অনেকেই পরনির্ভরশীল হয়ে পড়েন। সময়ের হিসাবে মানুষ যতই প্রবীণ হয়, ততই তার জ্ঞান, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা বাড়তে থাকে। কিন্তু তখন কমতে থাকে স্মরণশক্তি, কর্মক্ষমতা, আয়, সিদ্ধান্ত গ্রহণে দৃঢ়তা, বাড়তে থাকে রোগব্যাধি। আর সে কারণেই সংসারে কমতে থাকে প্রবীণদের গুরুত্ব। দুঃখজনক হলেও সত্য, যে বাবা-মা এক সময় শক্ত হাতে সংসারের হাল ধরেছেন, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তাদের বোঝা মনে করছে অনেক সন্তান। তখন তাদের বৃদ্ধ বাবা-মায়ের ঠাঁই হয় বৃদ্ধাশ্রমে। অনেক প্রবীণ পরিবারের সঙ্গে থাকলেও প্রতিনিয়তই বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হন।
গবেষণালব্ধ তথ্য থেকে জানা যায়, প্রবীণ নর-নারীদের মধ্যে কিছু কিছু আচরণগত সমস্যা/বৈকল্য যেমন-স্মরণ শক্তির ত্রুটি, বিভ্রান্তি, মনোযোগের অভাব, সময় স্থান ও ব্যক্তির সঠিক অবস্থান বোঝয় অসক্ষমতা, সন্দেহ প্রবণতা, কখনও কখনও নৈতিক অধঃপতন, ভ্রান্ত প্রত্যক্ষন বিশেষত উৎপীড়িত হওয়ার অমূলক আশঙ্কা ও উৎকণ্ঠা, শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ক্রিয়াপ্রণালী সম্পর্কে অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা করা প্রভৃতি – এগুলো প্রবীণ ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের মৃদ্যু বৈকল্য নির্দেশ করে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রবীণ ব্যক্তিদের ব্যক্তিত্বের গুরুতর বৈকল্য দেখা দেয়ার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দারিদ্র্য ও নির্ভরশীলতার অন্যতম প্রতীক হচ্ছে প্রবীণ জনগোষ্ঠী। দরিদ্র পরিবারের প্রবীণরা কোনো উপায় পেয়ে ভরণ-পোষণের তাগিদে কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ এমনকি ভিক্ষাবৃত্তির মত মানবেতর কাজেও জড়িয়ে পড়েন, যা অমানবিক। গ্রামাঞ্চলে অনেক পরিবারেই সন্তানরা পিতামাতাকে বিষয় সম্পত্তির মতো নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিয়ে থাকে, ফলে প্রবীণরা বঞ্চিত হয় চিকিৎসাসহ বহুবিধ মৌলিক সেবা থেকে। অধিকাংশ প্রবীণ পারিবারিক ও সামাজিকভাবে উপেক্ষিত, অবহেলা, বঞ্চনা, নিরাপত্তাহীনতার শিকার হয়ে সমাজের বাড়তি বোঝা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। শহরে বসবাসরত প্রবীণরা স্বাস্থ্য সেবার সুবিধা কিছুটা ভোগ করলেও গ্রামে তা একেবারেই অনুপস্থিত বলা যায়। শেষ জীবনে প্রবীণরা নানা রোগ-ব্যাধির শিকার হয়। আমরা মনে করিÑ প্রবীণ জনগোষ্ঠীর বহুমুখী সমস্যা মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সরকারের পাশাপাশি সমাজের সকল ব্যক্তিকেই এগিয়ে আসতে হবে।