সুনামগঞ্জ শহরে মদ সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। ফলে তরুণ-যুব সমাজ এর প্রতি আসক্তি হয়ে পড়ছে দিন দিন। অবস্থা এমনই যে ‘হাত বাড়ালেই মদ মিলে’। এ ব্যাপারে দৈনিক সুনামকণ্ঠে গতকাল প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সরকারি লাইসেন্স নিয়ে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই শহরের পশ্চিম বাজারের পাট্টা (মদের দোকান) থেকে বিক্রি করা হচ্ছে হাজার হাজার লিটার মদ। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের হাতেও তুলে দেওয়া হচ্ছে মদের বোতল। মদ ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্টরা যদিও দাবি করছেন তারা প্রতি মাসে কেবল শহরেই সাপ্লাই দেন ৩ হাজার লিটার মদ। তবে অভিযোগ রয়েছে এর চেয়ে বেশি মদ বিক্রি করা হচ্ছে।
অভিযোগ থেকে জানাগেছে, ওই পাট্টা থেকে মদ বিক্রির জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট লোক। যারা বিভিন্ন পয়েন্টে থেকে মদ বিক্রিতে সহায়তা করেন। এমনকি অর্ডার অনুযায়ী হোম ডেলিভারিও দেয়া হচ্ছে।
জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যে, সুনামগঞ্জ শহরে লাইসেন্সধারী মদের গ্রাহক আছেন মাত্র ৬৫১জন। অথচ মদ ব্যবসায়ীরা লাইসেন্সধারী ছাড়াও যে কারো কাছে মদ বিক্রি করছেন। শহরের পাড়া-মহল্লায় বিভিন্নভাবে সরবরাহ করা হচ্ছে মদ। বিষয়টি উদ্বেগজনক।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যে, ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে জেলায় কেবল মদ উদ্ধার ও এ সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা কয়েক শতাধিক। যেগুলোর প্রত্যেকটিতেই অপরাধীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। এর মধ্যে কেবল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনেই দায়েরকৃত মামলার সংখ্যা ৩৮৫টি। আর বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা হয়েছে আরো ১০৮টি মামলা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আরো ৩৮৫টি মামলা দায়ের করা হয়। পাশাপাশি বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের হয় আরো ৭৮টি মামলা। যেগুলোর প্রায় প্রত্যেকটিতেই বিপুল পরিমাণে মদ উদ্ধারসহ সাপ্লাইয়ার ও সেবনকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার রেকর্ড অনুযায়ী, চলতি বছরই এ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের হয়েছে ৮১টি মামলা। বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরো ২২টি মামলা রয়েছে। সদর মডেল থানায় গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে মদ উদ্ধারসহ বহনকারী এবং সেবনকারীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানে বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের হয় ৩৫টি মামলা। পাশাপাশি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আরো ৫৪টি মামলা দায়ের করা হয়।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই কার্যক্রম থেকে আমরা বুঝতে পারি তারা মাদক প্রতিরোধে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। তবে প্রশ্ন জাগে শহরের কেন্দ্রস্থলে অর্থাৎ পশ্চিম বাজারের পাট্টায় অবাধে লাইসেন্সধারী ছাড়া মদ বিক্রি হলেও কার্যকর ব্যবস্থা কেন নেয়া হচ্ছে না। অবাধে মদ বিক্রির ‘ওপেন সিক্রেট’ বিষয়টিকে কোনোভাবেই ছাড় দেয়া যায় না। আমরা আশা করবো এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসন দ্রæত পদক্ষেপ নেবে। কালক্ষেপণ না করে মাদকের এই ভয়াল থাবা থেকে সুনামগঞ্জকে রক্ষা করতে কঠোর পদক্ষেপ নেবে। আমরা চাই, মদের অবাধ বাণিজ্য বন্ধ হোক। মাদকমুক্ত থাকুক শান্তি-সম্প্রীতির জেলা সুনামগঞ্জ।