সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তির কল্যাণে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশও। কিন্তু প্রযুক্তির আশীর্বাদ যেমন আছে তেমনি আছে এর অভিশাপও। তার মধ্যে আজ যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে ক্রমবর্ধমান সাইবার অপরাধ। যার জালে প্রায়ই ফেঁসে যায় সাধারণ মানুষ।
রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক¤িপউটার সায়েন্সের ছাত্র ছিলেন রুবেল ইসলাম। একটি ইংলিশ মিডিয়ামে ‘এ’ লেভেলের এক ছাত্রীর সঙ্গে ২০১০ সালে ফেসবুকে পরিচয় হয় তার। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ওই ছাত্রীর সঙ্গে পরিচয়ের একপর্যায়ে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে ওই ছাত্রীকে দিয়েই তার নগ্ন ছবি তোলায় সে। পরে ওই ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ছাত্রীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় ১২ ভরি সোনার অলঙ্কার। পরে অবশ্য ডিবির জালে আটকা পড়ে সে।
এমন সব সাইবার অপরাধীদের বিচারে এবার সিলেটসহ সাত বিভাগীয় শহরে সাতটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। অপরাধীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোর বিচার দ্রুত নি®পত্তির জন্যই ট্রাইব্যুনালগুলো গঠন করা হচ্ছে। ট্রাইব্যুনাল গঠনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের অনুমোদন চেয়ে আইন মন্ত্রণালয় সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনাও পাঠিয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে দেশে সাইবার অপরাধ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম- বিশেষ করে ফেসবুক, টুইটার, ইন্টারনেটসহ নানা মাধ্যম ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধির সঙ্গে এ অপরাধও বাড়াছে সমান তালে। তাই দেশের নানা জায়গায় এসব অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলাও হচ্ছে অনেক বেশি। মামলাগুলো নি®পত্তির জন্য সাত বিভাগীয় শহরে সাতটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, বর্তমানে ঢাকায় সাইবার ট্রাইব্যুনাল নামে একটি ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। সাইবার ক্রাইম আইনের ৬৮ ধারায় সরকার প্রয়োজন মতো ট্রাইব্যুনাল গঠনের এখতিয়ার রাখে। সাতটি ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাব অনুমোদনের পাশাপাশি এসব ট্রাইব্যুনালে জেলা জজ পদমর্যাদার সাতজন বিচারকের পদ সৃজনসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক পদে লোকবল নিয়োগের কথাও বলা হয়েছে।
যদিও ‘তথ্য ও প্রযুক্তি আইন ২০০৬’ এর ৬৮(১) ধারায় বলা হয়েছে- সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধের কার্যকর বিচারের উদ্দেশ্যে এক বা একাধিক সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। আর সুপ্রিম কোর্টের সাথে পরামর্শক্রমে, সরকারের নিযুক্ত একজন দায়রা জজ বা একজন অতিরিক্ত দায়রা জজের সমন্বয়ে গঠিত হবে এই ট্রাইব্যুনাল। এভাবে নিযুক্ত একজন বিচারক ‘বিচারক-সাইবার ট্রাইব্যুনাল’ হিসেবে অভিহিত হবেন। এছাড়া সরকার এ আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধের দ্রুত ও কার্যকর বিচারের উদ্দেশ্যে এক বা একাধিক সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে।
সাইবার অপরাধের লাগাম টেনে ধরতে বিশ্বের অনেক দেশেই প্রণয়ন করা হয়েছে বিভিন্ন আইন। ক্রমাগত সাইবার সংক্রান্ত অপরাধ বাড়ার কারণে ‘তথ্য ও প্রযুক্তি আইন ২০০৬’ নামে আমাদের দেশেও এ আইনটি পাস হয়, যা ২০১৩ সালে সংশোধিত হয়। যদিও তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগটি নেয়া হয় ২০০২ সালে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে আইন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘জনপ্রশাসন এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের ছাড় পেলে সাত বিভাগে সাতটি সাইবার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল গঠনের কাজ শুরু হবে। ইতোমধ্যে কাজটি অনেকটাই এগিয়েছে।’
তিনি জানান, ঢাকায় এ ট্রাইব্যুনাল থাকায় চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট, খুলনা, রংপুর ও ময়মনসিংহে এ ট্রাইব্যুনালগুলো স্থাপন করা হচ্ছে।